শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের হয়ে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত সময়ে ২৬ টেস্ট ও ৩৫ ওয়ানডে খেলেছেন সাবেক ওপেনার ও মিডিয়াম পেসার চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। মূল পরিচয় ওপেনার হলেও, বোলিংটা পারতেন বেশ ভালই। টেস্টে ৩২ ইনিংস ও ওয়ানডেতে ২৫ ম্যাচে তার হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়কেরা।
ওপেনার হাথুরুর টেস্টে ১৭ এবং ওয়ানডেতে রয়েছে ১৪টি উইকেট। এর মধ্যে তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৯২ সালের কলম্বো টেস্টে, ৬৬ রানে ৪ উইকেট। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ডেভিড বুন, মার্ক ওয়াহ, ডিন জোনস ও অ্যালান বোর্ডারকে আউট করেছিলেন হাথুরুসিংহে।
তার বোলিংয়ের কল্যাণেই প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৫৬ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু হাথুরুসিংহের বোলিংয়ের তৃপ্তি বেশিক্ষণ টেকেনি। কেননা সেই ম্যাচটি এখনও হয়ে আছে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের অন্যতম হতাশাময় টেস্ট ম্যাচ।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে ২০০ রানের বেশি লিড থাকার পরেও ম্যাচ হেরে যাওয়ার ঘটনা মাত্র ৩টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিড থাকার পরেও হেরে যাওয়ার ম্যাচটিই ছিল হাথুরুর ৪ উইকেট নেয়ার সেই ম্যাচ।
কলম্বোর সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৫৬ রানে থামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। জবাবে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকান আসাঙ্কা গুরুসিংহে (১৩৭), অর্জুনা রানাতুঙ্গা (১২৭) ও রমেশ কালুভিদরানা (১৩২)। এ তিন সেঞ্চুরিতে ভর করে ৫৪৭ রানের পাহাড়ে চড়ে স্বাগতিকরা। লিড দাঁড়ায় ২৯১ রানের।
বিশাল লিডের নিচে চাপা পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় বোর্ডারের অস্ট্রেলিয়া। লঙ্কানদের মতো কেউ সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেনি। তবে চল্লিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেন ৬ ব্যাটসম্যান, দুই অঙ্ক স্পর্শ করেন ১১ জনের সবাই। ফিফটি আসে বুন (৬৮), জোনস (৫৭), মার্ক ওয়াহ (৫৬) ও গ্রেগ ম্যাথুজের (৬৪) ব্যাট থেকে।
দলীয় পারফরম্যান্সের সুবাদে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৭১ রান। ফলে ম্যাচ জিততে শ্রীলঙ্কার সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৮১ রানের। এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ৭৬ রান যোগ করে ফেলেন রোশান মাহানামা ও চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
প্রথম ইনিংসে ১৮ রান করা হাথুরু এবার আউট হন ৩৬ রানে, মাহানামার ইনিংস থামে ৩৯ রানে। এরপরেও দলকে জয়ের পথেই রাখেন গুরুসিংহে ও অরভিন্দ ডি সিলভা। দলীয় ১২৭ রানের মাথায় ৩৯ রান করে ফেরেন ডি সিলভা। সেখান থেকেই মোড়ক লাগে লঙ্কানদের ইনিংসে।
প্রথম ইনিংসে ম্যাচের সর্বোচ্চ ১৩৭ রানের ইনিংস খেলা গুরুসিংহে একপাশে অপরাজিত থেকে যান ৩১ রান করে। কিন্তু শেষের সাত ব্যাটসম্যানের কেউই পারেননি দুই অঙ্কে যেতে। শ্রীলঙ্কা তাদের শেষ ৮ উইকেট হারায় মাত্র ৩৭ রানে, ইনিংস থামে ১৬৪ রানে। ফলে ১৮০ রানের লক্ষ্যে তাদের মেলে ১৬ রানের পরাজয়।
টেস্ট ইতিহাসে এর (২৯১ রান) চেয়ে বেশি লিড থাকার পর আর কোন দল টেস্ট হারেনি। যা সেদিন করে দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া ২০০ রানে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচ জেতার অন্য দুই নজিরও অস্ট্রেলিয়ারই।
প্রথমটি প্রথমটা ১৯৫০ সালের ডারবান টেস্টে। প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রানের লিড থাকার পরেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫ উইকেটে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সবশেষ ২০১০ সালের সিডনি টেস্ট। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২০৬ রানে পিছিয়ে পরেও ৩৬ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।