হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি
মোস্তাফিজুর রহমানকে জানানো হয়, এমিরেটসের ফ্লাইটে উঠতে হলে করোনা নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে।
ওই সনদ না থাকায় গতকাল শনিবার সপরিবার যুক্তরাজ্যে যেতে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও
কয়েকজন যাত্রী।
করোনা সনদ নিয়ে আকাশপথে ভ্রমণ বাধ্যতামূলক করার কারণে মোস্তাফিজুর রহমানের মতো বহু বিদেশগামী
যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বিমান সংস্থাগুলো বা বিভিন্ন দেশ সিদ্ধান্ত দেওয়ায় হয়রানি
এবং আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। মোস্তাফিজুরের মতো একই অবস্থা হয়েছিল কাতার এয়ারওয়েজের ঢাকা
থেকে যাওয়া বাংলাদেশি যাত্রীদের ক্ষেত্রেও। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পরও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ১৪৬ যাত্রীকে
রোম বিমানবন্দর থেকে ৯ জুলাই ফেরত পাঠায় ইতালি সরকার। ইতালির মতো চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশিরা ফেরত যাওয়ার পর তাঁদের অনেকের করোনা শনাক্ত হয়। তাই সেসব দেশও বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট
চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও)
বিমানযাত্রীদের কোভিড সনদ বাধ্যতামূলক করে কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলে জানান বাংলাদেশ বেসামরিক
বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
গতকাল তিনি বলেন, তবে বিভিন্ন দেশ কোভিড সনদ থাকার কথা বলেছে। অনেক বিমান সংস্থাও যাত্রীদের
করোনা সনদ রাখতে বলেছে।
তবে হঠাৎ করে ঘোষণা দেওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাগুলোকে বলা হবে।
এই পরিস্থিতিতে আজ রোববার আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বেবিচকের চেয়ারম্যান বলেন, কোভিড পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে ওই সভায় আলোচনা হবে।
মোস্তাফিজুর জানান, কাতারসহ বিভিন্ন বিমান সংস্থা কোভিড সনদ বাধ্যতামূলক করেছে জেনে এমিরেটসের
সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়, এমন সনদ প্রয়োজন হবে না।
শুধু বলা হয়, যুক্তরাজ্যে কোথায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, সেই ফরম পূরণ করেছেন কি না।
গতকাল সকালে করোনা সনদ না থাকায় বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরে আসেন তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন,
৯ জুলাই রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের
যাত্রীদের জন্য কোভিড সনদ বাধ্যতামূলক রাখার নির্দেশনা দিয়েছে।
সনদের মেয়াদ হবে ৯৬ ঘণ্টা। এর মধ্যে যাত্রীদের ভ্রমণ করতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগের একাধিকবার ফ্লাইট বাতিলের কথা ই–মেইল ও এসএমএস
করে এমিরেটস তাঁকে জানিয়েছিল। নতুন সিদ্ধান্তের কথা তারা জানায়নি। তা ছাড়া টিকিট কনফার্ম হওয়ার পর
তাঁর কাছে সময় ছিল ৪৮ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে জানলেও কোভিড পরীক্ষার সনদ পাওয়া সম্ভব নয়।
এমিরেটসের লন্ডন কাস্টমার সেন্টারে যোগাযোগ করে আগামী ৬ আগস্ট টিকিট বুকিং পেয়েছেন মোস্তাফিজুর। কোরবানির ঈদের আগমুহূর্তে কোনো ‘বিশ্বস্ত’ প্রতিষ্ঠান থেকে করোনা পরীক্ষা করানো সম্ভব কি না, সেটি তাঁর কাছে
এখন বড় প্রশ্ন।
এ ব্যাপারে এমিরেটসের ঢাকা অফিসে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ বক্তব্য দিতে চাননি। কতজন যাত্রী এমন
পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তা–ও বলতে চাননি তাঁরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান,
রোমে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কাতার এয়ারওয়েজের যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজনের করোনা শনাক্ত হলে এমিরেটস
তাঁদের যাত্রীদের কোভিড পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করে। এমিরেটস সূত্র জানায়, ওয়েবসাইটে প্রকাশ ছাড়াও
যাত্রীদের ই–মেইলে ও এসএমএস করে জানানো হয়েছিল। তবে এটি কারও কাছে না–ও যেতে পারে।