দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া নভেল করোনাভাইরাসের মিউটেটেড বা পরিবর্তিত একটি স্ট্রেইনের মুখোমুখি হয়েছে। এই পরিবর্তিত ভাইরাসটিকে আরো সংক্রামক কিনা তা অধ্যয়ন করে দেখছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হওয়া ফিলিপাইন।
এর আগে ডি৬১৪জি নামে পরিচিত এই স্ট্রেইন বিশ্বের অন্যান্য অংশেও দেখা গিয়েছিল। মালয়েশিয়ার একটি ক্লাস্টারে এটি পাওয়া গিয়েছিল, ভারত থেকে ফিরে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ওই ক্লাস্টারে ৪৫ জন আক্রান্ত হয়। ফিলিপাইন তার রাজধানীর বৃহত্তম শহরে র্যানডম কভিড ১৯ নমুনার মধ্যে এ স্ট্রেইন শনাক্ত করেছে।
গত সোমবার ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে ফিলিপাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মারিয়া রোজারিও ভার্জিয়ার বলেছেন, এই পরিবর্তনটি উচ্চতর সংক্রমণের সঙ্গে জড়িত থাকার আশঙ্কা রয়েছে, তবে এমনটা বলার মতো আমাদের কাছে এখনো যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
এই স্ট্রেইনটি অন্যান্য অনেক দেশে পাওয়া গিয়েছে এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে এটা প্রধানতম ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এই স্ট্রেইনটি আরো মারাত্মক রোগের দিকে পরিচালিত করার কোনো প্রমাণ নেই। চীনের সাম্প্রতিক কালের প্রাদুর্ভাবেও এই পরিবর্তনটি শনাক্ত করা হয়েছে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড বায়োস্ট্যাটিসটিকস বিভাগের প্রধান বেনজামিন কাউলিং বলেন, মহামারীতে কোনো প্রমাণ নেই যে স্ট্রেইনের পরিবর্তন অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় আরো সংক্রামক হয়ে ওঠে।
আগের তুলনায় বরং এটা এখন আরো বেশি পরিচিতি পেয়েছে, যা অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় এটার বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। এই স্ট্রেইনটি কিছুটা বেশি সংক্রামক হতে পারে, এমনটা মূল্যায়নের জন্য আমরা এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ পাইনি।
মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক নুর হিশাম আবদুল্লাহ একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, লোকদের সতর্ক হওয়া দরকার এবং আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার, কারণ স্ট্রেইনটি মালয়েশিয়ায় পাওয়া গিয়েছে। তিনি কোনো গবেষণার উদ্ধৃতি না দিয়ে বলেছেন, এই স্ট্রেইনটি ১০ গুণ বেশি সংক্রামক হতে পারে।
জনগণের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন, যেন আমরা একসঙ্গে যেকোনো পরিবর্তন থেকে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে দিতে পারি।
নুর হিশাম সতর্ক করে দিয়েছেন, গবেষণা চলমান থাকা ভ্যাকসিনগুলো স্ট্রেইন পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অসম্পূর্ণ বা অকার্যকর হতে পারে। তবে সেল প্রেসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, স্ট্রেইনের পরিবর্তন বর্তমানে তৈরি করা ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতায় বড় প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা নেই।
মালয়েশিয়া বিশ্বজুড়ে অন্য কোথাও দেখা দেয়া ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোধ করতে সক্ষম হলেও দেশটিতে পাওয়া ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত শনিবারও দেশটিতে ২৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে, যা জুলাই মাসের পর সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে ফিলিপাইনে ভাইরাসটিতে সোমবার পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত শনাক্তের মধ্যে ৭৬ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছে জুলাই মাসের শেষ দিকের পর থেকে। এটা এক সপ্তাহ আগে ইন্দোনেশিয়াকে ছাড়িয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাবের দেশ হয়ে উঠেছে।
দ্য প্রিন্ট