ইইউর ফাঁদে লন্ডন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ব্রেক্সিট বিচ্ছেদ চুক্তিকে অগ্রাহ্য করে বরিস জনসনের উত্থাপিত নতুন বিলের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এ নিয়ে দেশটির সাবেক পাঁচ প্রধানমন্ত্রী নতুন বিলটির বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন।

ফলে নিজ দেশেই নতুন করে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বিশ্লেষকদের মতে, ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যের এমন পরিণতিই হওয়ার কথা ছিল। তারা একে লন্ডনের জন্য পাতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফাঁদ হিসেবে দেখছেন।

দ্য ইন্টার্নাল মার্কেট বিল যাকে জনসন সরকার নিজেদের বীমা পলিসি হিসেবে বিবেচনা করছে, তা নিয়ে খোদ কনজারভেটিভ সরকারের এমপিদের মধ্যেই রয়েছে ধোঁয়াশা। জ্যেষ্ঠ অনেক এমপি ইতিমধ্যেই এই বিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের বর্তমান অবস্থা একটি মিথ্যাকে ঢাকতে দশটি মিথ্যা বলার মতো। ব্রেক্সিটের আগে জনসন জনগণকে বুঝিয়েছিলেন যে, ব্রেক্সিট হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আর কোনো সমস্যা হবে না, সহজেই বাণিজ্য চুক্তি করা যাবে। কিন্তু ব্রেক্সিট হওয়ার পর সময় গড়ালেও বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার কোনো নাম নেই। উল্টো বাণিজ্য চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে উভয়পক্ষই কূটচালে জড়িয়ে পড়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি অগ্রাহ্য করা হলে লন্ডন আরও বেশি চাপে পড়বে। কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ও স্যার জন মেজর এবং লেবার পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউনও জনসনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন।

কথা ছিল বরিস জনসন তার পরিকল্পনার বিস্তারিত নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলবেন। কিন্তু ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট থেকে জানানো হয়, পার্লামেন্টে জরুরি কাজের জন্য সংবাদ সম্মেলনটি বাতিল করা হয়েছে। জনসন আশা করছেন তিনি কমন্সে উত্থাপিত তার বিলটি পাস করিয়ে আনতে পারবেন।

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, কমন্সে জনসন বিলটি নিয়ে কথা বলতে গেলেই আরও নতুন সব সমস্যায় জড়িয়ে পড়বেন। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল জিওফ্রে কক্স তো সরাসরিই বলেছেন, তিনি জনসনের বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত রেহমান চিশতি তো এই বিলের কারণে পদত্যাগই করেছেন।

গত ৩১ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যায় যুক্তরাজ্য। ওই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত বিশদ আলাপে গেলেও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি।

আর এবারের ঝামেলাই শুরু হয়েছে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে লন্ডনের বাণিজ্যিক শুল্ক নিয়ে। লন্ডন দাবি করছে, তারা নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসায় কোনো শুল্ক দেবে না। কিন্তু এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, লন্ডনকে এই শুল্ক দিতে হবে, যেহেতু ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্য ইউরোপের বাইরে চলে গেলেও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ইউনিয়নের এখনো সম্পর্ক রয়েছে।

জনসনের দ্য ইন্টারনাল মার্কেট বিলটি এই জন্যই জনসন সরকার উত্থাপন করেছে যাতে ব্রেক্সিট চুক্তির কিছু অংশ অগ্রাহ্য করা যায় জনমতের ভিত্তিতে। কিন্তু এই চুক্তি অগ্রাহ্য করতে গেলে একদিকে যুক্তরাজ্যকে যেমন আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করতে হবে, অন্যদিকে পার্লামেন্টে নতুন করে পুরনো সংকট বৃদ্ধি পাবে।

এক্ষেত্রে কোনো চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতা থেকে সরেও যেতে পারে। আর তা হলে ক্ষমতা চলে যাবে লেবার পার্টির দিকে। কিন্তু এমন বাস্তবতা যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রশাসন হতে দিতে চাইবে কি-না তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।

সুত্র দেশ রূপান্তর

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.