বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখা বাপার দখলে

img_dwn32এভিয়েশন নিউজ, ঢাকা : বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ও স্পর্শকাতর শাখা ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের সব কর্মকর্তাদের একযোগে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ পদ অবৈভাবে দখলে নিয়েছে বাংলাদেশ পাইলট এসোসিয়েশনের (বাপা) বর্তমান ও সাবেক নেতারা। গত ৫ মে দুটি পৃথক নির্বাহী আদেশে এই পরিবর্তন আনা হয়। নতুন আদেশে পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বোয়িং ৭৭৭ এর লাইন পাইলট ক্যাপ্টেন ফরহাত হাসান জামিলকে। আর সাবেক ডিএফও ক্যাপ্টেন কামাল সাইদকে বোয়িং ৭৭৭ এর লাইন পাইলটে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া চীফ অব ট্রেনিং করা হয়েছে বোয়িং ৭৭৭ এর পাইলট ক্যাপ্টেন একেএম আমিনুল ইসলামকে। এ পদে থাকা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদকে লাইনে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। চীফ অব সেফটি করা হয়েছে ক্যাপ্টেন শোয়েব চৌধুরীকে। এছাড়া চীফ অব টেকনিক্যাল করা হয়েছে ক্যাপ্টেন ফজলকে। ডেপুটি চীফ অব ফ্লাইট সেফটি হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন বোয়িং ৭৩৭ এর লাইন পাইলট ক্যাপ্টেন এনামুল হক। এ পদে থাকা ফাস্ট অফিসার আবু নাসের আহমেদ ইমরানকে লাইন পাইলটে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। ডেপুটি চীফ অব প্ল্যানিং এন্ড সিডিউলিং হিসাবে বোয়িং ৭৩৭ এর ফাস্ট অফিসার ইলিয়াস নিক্সন বাড়ৈকে নিয়োগ দেয়া হলেও তিনি ওই পদে যোগদান করেননি। একারণে সোমবার এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ফাস্ট অফিসার ক্যাপ্টেন এনায়েত হোসেনকে। এছাড়া ডেপুটি চীফ অব ট্রেনিং হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ফাস্ট অফিসার তাপস আহমেদকে। এ পদে থাকা ফাস্ট অফিসার নজরুল ইসলাম শামীমকে ড্যাস-৮ এর লাইন পাইলটে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। ডেপুটি চীফ অব টেকনিক্যাল করা হয়েছে ফাস্ট অফিসার হাসিবকে। বর্তমান ডেপুটি চীফ অব প্ল্যানিং এন্ড সিডিউলিং ফাস্ট অফিসার সাইফুজ্জামানকে লাইনে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া সোনা চোরাচালান মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়া চীফ অব সিডিউলিং ক্যাপ্টেন শহীদ এর পদে নিয়োগ দেয়া হয় ক্যাপ্টেন নাদিম রাব্বানীকে।
এদিকে সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট অপারেশন শাখার একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বিমানের অপারেশনাল ম্যানুয়াল লঙ্ঘন করে বেশ কটি গুরুত্বপুর্ণ পদে বাংলাদেশ পাইলট এসোসিয়েশনের (বাপা) একাধিক নেতাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন আইন ও দেশের রেগুলেটরি কমিশনের আইনে এটি মারাত্বক অপরাধ। এই ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন বলেও জানান। তারা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট পদগুলো থেকে বাপার সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন। অণ্যথা যে কোন সময় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখায় বড় ধরনের অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। নতুন নিয়োগ পাওয়া এসব পদগুলোর মধ্যে রয়েছে চীফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন একেএম আমিনুল ইসলাম। তিনি বর্তমান বাপার কার্য নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য। এর আগের কমিটিতেও তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া চীফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন শোয়েব আহমেদ বাপার বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। চীফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন ফজল গত জানুয়ারী মাসে শেষ হওয়া বাপার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিমানের সাবেক বোর্ড মেম্বার ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল আলম জানান, নিয়ম অনুযায়ী বাপার কোন নেতাকে ম্যানেজমেন্টের কোন পদে নিয়োগ দেয়া ঠিক হয়নি। কারণ তারা পাইলটদের একটি গ্র“পের পক্ষে নির্বাচন করে জয় লাভ করেছেন। ম্যানেজমেন্টের শীর্ষ পদে বসে এখন ইচ্ছা করলেই বিরোধী পক্ষের উপর প্রতিশোধ নিতে পারে। বাপার সাবেক একজন সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিমানের অপারেশনাল ম্যানুয়েল অনুযায়ী বাপার নির্বাচিত কোন নেতাকে ম্যানেজমেন্টে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বাপা ছাড়ার পরও তাদের এক বছর অপেক্ষা করতে হবে ম্যানেজমেন্টে যাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, বর্তমানে নিয়োগকৃত ফ্লাইট অপারেশনের পুরো টিমকেই মনে হচ্ছে বাপা থেকে সাজিয়ে দেয়া। সবাই বাপার নেতাদের ঘনিষ্টভাজন। নাম প্রকাশ না করার শতে একজন পাইলট জানান, বিমানের ইতিহাসে এটা নজির বিহীন। বর্তমান ব্যবস্থাপনায় চেক অব ব্যালেন্স থাকবে না। তিনি বলেন, বর্তমান বাপা ৪০ শতাংশ পাইলটদের ভোট পায়নি। শীর্ষ পদগুলোতে গিয়ে এখন তারা এই ৪০ শতাংশ পাইলট-ফাস্ট অফিসারদের উপর নানাভাবে নির্যাতন চালাবে। তবে বিমানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ফ্লাইট অপারেশন শাখার অধিকাংশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যাবহার ও ক্রু নির্যাতনের অভিযোগ আছে। বেশক‘জন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী কেবিন ক্রুদের ওপর নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগও বিমানে ফাইল বন্দি হয়ে আছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঘনিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.