২২০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। ওই পত্রে ভাড়া করা বিমানে করে ছয় ধাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। মার্কিন দূতাবাসের এ নোট ভারবাল পেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুচিন্তিত মতামত দিতে বলা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের মতামত পাঠাতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের মতামতে বলেছে, নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা হওয়ার আগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা ঠিক হবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ই এপ্রিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস কূটনৈতিক পত্র নং-ডি১-১০৪৪৩-এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়। এরপর ১৭ই এপ্রিল বিষয়টি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায় তারা। মার্কিন দূতাবাস প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তাদের প্রস্তাবে ৪ থেকে ২৫শে মে ছয়টি ফ্লাইটে ২২০ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়। তবে বাংলাদেশের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ৪ ও ১১ই মে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো চার্টার্ড ফ্লাইট আসেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১শে মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলান বারসিন এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের সহকারী পরিচালক মারলেন পিনেইরো বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সফরের সময় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সাক্ষাতে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে মার্কিন দূতাবাসের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে কাজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন বানিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান অনস্বীকার্য। ব্যক্তি তথা পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে বাংলাদেশিদের অনেকেই বৈধ বা অবৈধ পন্থায় অনেক সময় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যায়। এ কারণে বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলোর কয়েকটি অঞ্চলের নাগরিক বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র ভাষাগত মিল বিবেচনা করে কোনো আটক নাগরিকদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গণ্য করা ঠিক নয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী আটক যেসব নাগরিক বাংলাদেশের ঠিকানা সরবরাহ করবে তাদের দেয়া ঠিকানায় তদন্ত করে সঠিক প্রমাণিত হলে শুধু তাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা যুক্তিসঙ্গত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ প্রতিবেদনটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিবেদনে সুপারিশ আকারে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে অবস্থানকারী প্রাথমিকভাবে বিবেচিত বাংলাদেশি নাগরিকদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি বাস্তবায়নের পর প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। দুয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাবের কথা মার্কিন দূতাবাসকে জানাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ৫ই এপ্রিল রাতে অবৈধভাবে বসবাসরত ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। ফেরত পাঠানো ৩০ জনের মধ্যে নোয়াখালীর ১৩ জন, সিলেটের ৮ জন, মুন্সীগঞ্জের ২ জন, মাদারীপুর, ঢাকার তোপখানা রোড, শ্যামপুর, কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা এবং বরিশালের একজন করে রয়েছেন। এখন নতুন করে ২২০ জনকে ফেরত পাঠাতে যাচ্ছে দেশটি।