গুজরাট দাঙ্গায় গুলবার্গে নির্বিচারে আগুনে পুড়িয়ে, প্রকাশ্যে কুপিয়ে মুসলমানদের হত্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অতুল বৈদ্যসহ ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। দাঙ্গার ১৪ বছর পর উগ্রপন্থি এ হিন্দু নেতাকে অভিযুক্ত করল আহমেদাবাদের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম আদালত।
আগামী সোমবার ( ৬ জুন) দোষীদের বিরুদ্ধে রায় দেবে আদালত। সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ওই হত্যায় অভিযোগ আনা হয়েছিল ৬০ হিন্দু উগ্রপন্থির বিরুদ্ধে। দীর্ঘ তদন্তে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ থেকে ৩৬ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মামলার তদন্ত চলাকালে মারা যায় ৬ অভিযুক্ত।
২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির কথা। গুলবার্গের মুসলিম পাড়ায় অতর্কিতে নাঙ্গা তলোয়ার নিয়ে হামলে পড়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্র নেতাকর্মীরা। এ পাড়ায় চল্লিশটির মতো বহুতল ও বাংলো রয়েছে । আকস্মিক এ আক্রমণে দিশেহারা ওই পাড়ার বাসিন্দা মুসলমান নর-নারী দৌড়ে আশ্রয় নেন ওই পাড়ায় বসবাসকারী কংগ্রেস দলের লোকসভার সদস্য এসসান জাফরির বাড়িতে।
অবস্থা বেগতিক দেখে কংগ্রেসের এ রাজনীতিক পুলিশকে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও স্থানীয় থানা পুলিশের কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। চেষ্টা করেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার। সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের সাড়া না পেয়ে আগ্রাসী হিন্দু উগ্রপন্থিদের সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেন তিনি। কাজে আসেনি। পাড়ায় ঢুকে এ সময় বাড়ি-ঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ শুরু করে। উগ্রপন্থি হিন্দুরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
একপর্যায়ে বেপরোয়া এ দাঙ্গাবাজরা জাফরির বাড়ির চারদিকের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় আশপাশের বাড়ি-ঘরেও। আগুনে পুড়ে ঘরের ভেতরেই মারা যান কংগ্রেস এমপি জাফরিসহ ৩৫ জন। কুপিয়ে আরও ৩৪ জনকে খুন করা হয়। ভয়াবহ ওই তাণ্ডব থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা তদন্ত কমিটিকে দেয়া তথ্যে বলেছে, নৃশংস এ খুনের তাণ্ডব চলে ঘণ্টা ছয়েক।
মুসলমানদের ঘর-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া এবং তাদের প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল আগের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা রেলওয়ে স্টেশনে একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরায় রহস্যজনক আগুনের ঘটনাকে। ভোরের দিকে স্টেশনে অপেক্ষমাণ এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কামরায় লাগা ওই আগুনে পুড়ে মারা যায় ৫৯ করসেবক। মুসলমানরা এ আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ তোলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। যদিও পরে তদন্তে দেখা গেছে শট সার্কিট থেকে ওই আগুনের সূত্রপাত।
গুলবার্গ হত্যা দিয়ে শুরু হওয়া ওই দাঙ্গা পরবর্তীতে গুজরাট ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে। এতে কয়েক হাজার মুসলমানকে গুলি করে, কুপিয়ে খুন করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্র হিন্দুরা। হিন্দু উগ্রপন্থিদের মানুষ খুনে স্তম্ভিত হয় ভারতের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিসহ বিশ্ব সম্প্রদায়।
গুজবে ভর করে মুসলমান খুনের যে তাণ্ডব শুরু হয়েছিল গুজরাটে সে রাজ্যে তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আজকের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুসলামান হত্যা বন্ধে কোনো উদ্যোগ সে সময় তিনি নেননি বলে পরবর্তীতে একাধিক তদন্তে উঠে এসেছে। মুসলমান নিধনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্রপন্থিদের উস্কে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে এই নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। এসব তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।