আমদানিকৃত পণ্য চুরিতে জড়িত বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা!

cbহজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পণ্য চুরি হচ্ছে। এই চুরিতে বাংলাদেশ বিমানের লোডারদসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। বিমানের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজশে কার্গো ভিলেজে চুরির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা।

চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেডের আমদানিকৃত ৭৬ হাজার ৯৫০ ডলার (প্রায় ৬২ লাখ টাকা) মূল্যের পণ্য কার্গো ভিলেজ থেকে হারিয়ে যায়। আমদানিকৃত এসব পণ্য পরীক্ষা ও ডেলিভারির জন্য চাওয়া হলে কার্গো শাখায় কর্তব্যরত অফিসার ‘মালামাল পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে জানান। এবিষয়ে ২০ জানুয়ারি আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক, ২৫ জানুয়ারি আমদানি শাখার ব্যবস্থাপক এবং ৪ ফেব্রুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপকের কাছে আবেদন করেও পণ্য ফেরত পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও গত এক মাসে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে প্রায় ৫শ কার্টন পণ্য চুরির ঘটনা ঘটে। অনেক আগে থেকে আমদানি কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে। বিদেশ থেকে বিমানে একটি পণ্যের চালান আসার পর বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট অফিসার সেগুলো বুঝে নেন। বুঝে নেয়ার পর পণ্যগুলো রাখার একটি লোকেশন ঠিক করে দেন।

শাহজালালের পণ্য রাখার লোকেশনগুলো হচ্ছে ‘জিরো’, ‘ক্যানোপি-১’, ‘স্ট্রংরিয়ম ১, ২’, ‘মেইন ওয়্যারহাউজ-১, ২’। বিমানের ফ্লাইট অফিসারের দেয়া লোকেশন অনুযায়ী পণ্যগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার দায়িত্ব বিমানের লোডারদের। পণ্যের কাস্টমস ডিউটি দেয়ার পর পণ্যগুলো বুঝিয়ে দিতে হয়। তবে অনেকসময় বিমানের লোডাররা ইচ্ছে করে অন্যান্য স্থানে পণ্যগুলো রেখে ‘পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে দাবি করে। পণ্য চুরির মূলে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার পেছনে অবশ্য একটি যুক্তি রয়েছে। শাহজালালের আমদানি কার্গোর গেট প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তখন বাংলাদেশ বিমানের লোডাররা ছাড়া ভেতরে কেউ থাকে না। মাঝে মাঝে এপিবিএনের কয়েকজন সদস্য থাকেন।

বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বিমানের লোডাররা চুরির এসব পণ্য রানওয়ের পাশে একটি পরিত্যক্ত গোডাউনে রেখে দেয়। নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবসায়ী কিংবা সিঅ্যান্ডঅফ এজেন্ট কেউ এখানে যেতে পারে না। এই সুযোগে লোডার ও বিমানবন্দরের সিকিউরিটির লোকেরা মাল সরিয়ে ফেলে। পরে অবশ্য মালিককে ফোন দিয়ে সেই পণ্য আবার ফেরত দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে অনেক পণ্য খুঁজে না পেলেও টাকা দিলেই পণ্যের খোঁজ মেলে মুহূর্তেই। কোনো কোনো সময় মোটা অংকের টাকা আদায় করতে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষেও পণ্য অতিরিক্ত তিন-চার দিন আটকে রাখা হয়।

বেলায়েত নামে এক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী বলেন, সম্প্রতি সিম্ফনি মোবাইল হ্যান্ডসেটের একটি চালান থেকে ৪৫ পিস হারিয়ে যায়। এগুলোর প্রতিটির মূল্য ১০ হাজার টাকার বেশি। এখন পর্যন্ত মাল ফিরে পাইনি। বিমানের একটি সংগবদ্ধ চক্র চুরির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।

এসকেএফ বাংলাদেশের নির্বাহী কর্মকর্তা (আইন) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমন কার্যক্রমের কারণে এসকেএফের বিপুল পরিমাণে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’

ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পোর্ট সেক্রেটারি মো. আলমগীর  বলেন, প্রতিদিনই কার্গো ভিলেজ থেকে পণ্য খুঁজে না পাওয়ার অভিযোগ করছেন আমদানিকারকরা। এবিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে কয়েকবার চিঠি দেয়া হলেও কাজ হয়নি। বিমানের কার্গো বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আলী আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সমাধান দিতে পারেননি। গত এক বছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভিযোগ শাখায় পণ্যচুরি সংক্রান্ত মোট ৮ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। একটিরও সুরাহা করতে পারেনি তারা। চুরির ঘটনায় বিমানের কারো বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত নেই। এবিষয়ে জানতে কার্গোর জিএম আলী আহসানের মোবাইলে ফোন দিয়ে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। বুধবার বিকেল ৪টা ৯ মিনিটে তার অফিসের ল্যান্ডলাইন নম্বরটিতে ফোন দিলেও কেউ তা ধরেননি। এদিকে প্রতিনিয়ত পণ্যচুরির কারণে এই শাহজালাল পোর্ট ত্যাগ করছেন ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের রাজস্বে।

বিমানবন্দর কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, কোনো পণ্য বিমানপথে শাহজালালে নামার পর বাংলাদেশ বিমানের দায়িত্বে থাকে। আমদানিকারক কাস্টমস হাউজে শুল্ক দিয়ে পণ্য ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। সম্প্রতিক এসব চুরির কারণে আমদানিকারকরা আমাদের দুষছেন। আমাদের কাছে সমাধান চাইছেন যদিও আমরা এর অথরিটি নই। এবিষয়ে কয়েকদফায় মৌখিক ও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে অনেকেই পণ্য ফিরে পাননি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.