গণতন্ত্র বিরোধীরা এই জন্যই বলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত দেয় না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটিও মনে হয় সেই ধারণাকেই সত্য প্রমাণ করলো।
গণভোটের ফলাফল যখন জোট ছাড়ার পক্ষে ও বিপক্ষে যথাক্রমে ৫২ শতাংশ আর ৪৮ শতাংশ ঘোষণা করা হয় এর কয়েক ঘণ্টা পরই অনেক ব্রিটিশকে টিভি ক্যামেরার সামনে বলতে শোনা গেছে, আরেকবার গণভোটের সুযোগ থাকলে তারা জোটে থাকার পক্ষে ভোট দিতেন।
কেন এই উপলব্ধি? ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রবাজারে পাউন্ডের ১০ শতাংশ দরপতন হয়েছে। এই বিপর্যয় ব্রিটিশরা গত ৩১ বছরে দেখেনি। শেয়ারবাজারেও নেমেছে ধস। সামনে বড় ধরনের মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি আগে অনুমান করতে পারলে জোটে থাকার পক্ষেই ভোট দিতেন বলে এখন আফসোস করছে অনেক ব্রিটিশ।
তার মানে কি এটাই দাঁড়ায় যে, অনেকেই কিছু না বুঝেই ভোট দিয়েছেন। হয়তো নেতাদের গরম বক্তৃতায় প্রভাবিত হয়েছেন অনেকে। বিষয়টি বিচার বিশ্লেষণ করে দেখার আর প্রয়োজন মনে করেননি।
বহু মানুষ যে না বুঝেই ভোট দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল সেটার কিন্তু প্রমাণ মিলছে গুগলে। Google Trends এ দেখা যাচ্ছে, ফলাফল ঘোষণার প্রায় আট ঘণ্টা পর বহু ব্রিটিশ এমন কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর সার্চ করছেন যে তাতে স্পষ্ট তিনি ভোট দিয়েছেন কোনো কিছু না বুঝেই।
গুগল রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ‘আমরা যদি ইইউ ত্যাগ করি তাহলে কী হবে?’ এই প্রশ্নটি ভোটের ফল ঘোষণার আট ঘণ্টা পর যতোবার সার্চ করা হয়েছে তা ভোট শুরুর আগের তিনগুণ!
এই গণভোটের সময় প্রচারণায় অনেকে বর্ণবাদী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাবও উসকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে অভিবাসী ইস্যুটি সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিবাসীরা ব্রিটিশদের সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধায় ভাগ বসাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে বিষয়টি আরো কতো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে সেটিই জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন অনেকে। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে জোট থেকে বের হয়ে গেলে কী হবে, ব্রিটেনের লাভ-ক্ষতি কী হতে পারে সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। গুগল রিপোর্ট সেরকমই বলছে।
কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করলো যে ভোট, জনগণের মতামতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন সেই ভোটের তাহলে কী মূল্য থাকলো! শুধুই হুজুগে পড়ে এতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো মানুষ!
“What is the EU?” is the second top UK question on the EU since the #EURefResults were officially announced pic.twitter.com/1q4VAX3qcm
— GoogleTrends (@GoogleTrends) June 24, 2016