অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যটনের মৌসুম হলেও এবার মৌসুম আরো দীর্ঘ হচ্ছে। রমজানের ঈদকে ঘিরে প্রায় তিন মাস আগ থেকেই ব্যবসায় নেমেছেন পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে বাড়তি যোগ হছে এই ঈদের ৯ দিনের টানা ছুটি। তাই অতীতের যেকোনো ঈদের চেয়ে বেশি ব্যবসায় আশা করলেও গুলশানের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা আশা-হতাশার দোলাচলে রয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু হোটেলের অগ্রিম বুকিং বাতিল করেছেন বিদেশি পর্যটকরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য যেকোনো বারের চেয়ে এবারের ঈদ একেবারেই আলাদা তাদের কাছে। কেননা সাধারণত ঈদের ছুটি ৪-৫ দিন মিলিলেও এবার তা মিলল ৯ দিন। তাই অনেকেই ঈদের পরের মতো ঈদের আগেও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন। তবে সঙ্গে সম্প্রতি ঘটিত নাশকতা তাদের মনেও শঙ্কা তৈরি করেছে।
এদিকে পর্যটন খাতের বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনা দেশের পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট মহল এ ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কিভাবে সামাল দেন তার ওপর। তবে গুলশানের ঘটনায় বিদেশি পর্যটকরা এদেশ ভ্রমণ কমিয়ে দিতে পারেন বলেই আশঙ্কা তাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাকের আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় পুরো পর্যটন খাতই হোচট খাবে। বিশেষ করে তার প্রভাব বিনিয়োগেও পড়তে পারে। এমনিতেই সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি পর্যটক আসা কমিয়ে দেয়েছে। সব মিলিয়ে বছরে দুই লাখের মতো বিদেশি আসে। গুলশানের ঘটনার ধাক্কা সামলাতে এ খাতকে আরো তিন-চার মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে এরই মধ্যে অন্যকোনো অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটলে হয়তো বা তা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
এ দিকে পর্যটনের রাজধানী কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, টানা ৯ দিনের ছুটি হওয়ায় এবার প্রচুর পরিমাণ দেশি-বিদেশি পর্যটকের সাড়া মিলবে। ঈদের পর পর্যটন মৌসুমকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ২ শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে প্রায় শত ভাগ হোটেলের সিট অগ্রিম বুক হয়েছিল। নামি হোটেলগুলোতেও কোনো সিট খালি নেই। কিন্তু গুলশানের ঘটনার কারণে কিছু অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। তবে ইতোমধ্যে পর্যটন নগরীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের শতাধিক সদস্যকে।
এ বছর সড়ক পথের পাশাপাশি এবারের ঈদে অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোও বেশ তৎপর রয়েছে। ইউ-এস বাংলা ও নভোএয়ারসহ অন্যরা ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অভ্যন্তরীণ রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে দিয়েছে বিশেষ মূল্য ছাড়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত প্রতিবছর ঈদে একটি লম্বা ছুটি মেলে। ভ্রমণ পিপাসুরা এ সময়ের অপেক্ষায় থাকেন। এ ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, কুয়াকাটা, সিলেটসহ দেশের দর্শনীয় স্থান। এবার বেশি ছুটি, মৌসুমও বেশ লম্বা তাই তাদের প্রস্তুতিও আগের চেয়ে অনেক ভালো। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পর্যটন স্থান সংলগ্ন হোটেল-মোটেল ও ছোট বড় কটেজগুলো রং পাল্টানোসহ নতুন রূপে সেজেছে। বিভিন্ন পর্যটন শহরের আবাসিক হোটেল-মোটেল, সরকারি সার্কিট ও রেস্ট হাউসগুলোতেও অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার: ঈদের দিন থেকে পর্যটকের ঢল নামবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। পর্যটনশিল্পনির্ভর ব্যবসায়ীরা এবার দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বিদেশি পর্যটক আগমনের আশা করছেন। টানা ৯ দিনের লম্বা ছুটি আর ঈদুল ফিতর মিলিয়ে ৫ লাখ পর্যটকের আগমনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সব সাজানো হয়েছে নববধূর সাজে। বাদ যায়নি সৈকতের কিটকট ছাতা আর ক্ষুদ্র শামুক-ঝিনুকের দোকানগুলোও। জেলার পর্যটনের দর্শনীয় স্থান বিশেষ করে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, পাথুরে বিচ ইনানী, রামুর বৌদ্ধ বিহার ও মন্দির, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র যেন অতিথিদের অপেক্ষায়। অপেক্ষায় রয়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনও। পাশাপাশি ছেড়াদ্বীপের মতো ছোট ছোট দ্বীপ ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বোট ও ট্রলার।
তবে, গুলশানের ঘটনায় কিছুটা চিন্তায় পড়েছেন পর্যটকরা। তাই নিরাপত্তা জোরদার করেছে জেলা প্রশাসন। সৈকতের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্টের পাশাপাশি এবার ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফের পর্যটন এলাকাতেও নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে। সৈকতে গোসল করতে গিয়ে যাতে করে কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সেজন্য ৩০ জন লাইফ গার্ড সদস্যও প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ, কটেজে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে ৪০ হাজারের মতো সচেনতনামূলক লিপলেটও বিতরণ করা হয়েছে।
কুয়াকাটা: একই সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অপূর্ব অভিজ্ঞতা পৃথিবীর খুব কম দেশের মানুষের ভাগ্যেই ঘটে। কুয়াকাটায় সে সুযোগ পাবেন ভ্রমণপিয়াসীরা। এর বাইরে গঙ্গামতি চর, ফাতরার বন (সুন্দরবনের সংস্করণ), মিশ্রিপাড়ার বৌদ্ধমন্দির, রাখাইন পল্লী, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি কুয়াকাটার অন্যতম আকর্ষণ।
আরও খবর