গ্রিসে পাসপোর্ট জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেক বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ। ইউরোপে বৈধ হতে পাসপোর্টের ভুল তথ্যে দেওয়া ও এনালগ পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করায় নানান বিড়ম্বনায় পড়ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ সমস্যার কোনো সমাধান না পেয়ে অনেকটা হতাশায় ভুগছেন তারা।
গ্রিসে বর্তমানে ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। কিন্তু এদের মধ্যে বেশিরভাগের কাছেই নেই বৈধ কাগজপত্র। এমনকি অনেক প্রবাসী আছেন যাদের ইউরোপে বৈধতা তো দূরের কথা তাদের কাছে নিজ দেশের পাসপোর্টও নেই।
এদিকে, গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী নোতিস মিতারাচির বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা চুক্তি করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর চার হাজার করে পাঁচ বছরে মোট ২০ হাজার বাংলাদেশিকে মৌসুমি কাজের ভিসা দেবে গ্রিস। পাশাপাশি অনুমতি ছাড়া দেশটিতে অবস্থানরত ১৫ হাজার বাংলাদেশিকেও দেওয়া হবে সাময়িক বসবাস ও মৌসুমি কাজের অনুমতি।
গ্রিস প্রবাসী সিলেটের বাসিন্দা অজুদ মিয়া জানান, প্রায় ১০ বছর আগে ইরান-তুরস্ক হয়ে গ্রিসে আসেন তিনি। ওই সময় বাংলাদেশে ডিজিটাল পাসপোর্ট ছিল না। তাই এনালগ পাসপোর্টের মাধ্যমে গ্রিসে আসেন তিনি। তিনি গ্রিসে আসার সময় দালালের নির্দেশে সীমান্তে পাসপোর্টটি পেলে দিয়ে শূন্য অবস্থায় গ্রিসে আসেন তিনি। গ্রিসে এসে মানলোদা এলাকায় কৃষিকাজ শুরু করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, অবৈধ অবস্থায় বেশ কয়েক বছর গ্রিসে বসবাসের পর ওই দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি নিতে চান তিনি। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় দূতাবাস কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে নতুন পাসপোর্ট করতে হবে তাকে। অবশেষে ২০২১ সালে দূতাবাসের মাধ্যমে পাসর্পোট তৈরি করতে নির্ধারিত ফি ও সকল কাগজপত্র দেন তিনি। কিন্তু মাসের পর মাস চলে গেলেও পাসপোর্ট হাতে পাননি তিনি। দূতাবাস জানিয়েছে তার পাসপোর্ট ঢাকায় আটকে আছে। তাদের কিছু করার নেই। তাই বর্তমানে বৈধ হবার সুযোগ থাকলেও পাসপোর্ট না থাকায় এ সুযোগ হারানোর আশঙ্কায় আছেন অজুদ মিয়া। শুধু তিনি নন, তার মতো অনেক প্রবাসী পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন দেশটিতে।
অপর গ্রিস প্রবাসী মোহাম্মদ পাভেল জানান, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি দূতাবাসে গিয়ে পাসপোর্টের জন্য আঙ্গুলের চাপ দিয়ে আসেন। তখন তাকে বলা হয়েছিল ২-৩ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। কিন্তু প্রায় ৯ মাস কেটে গেলেও পাসপোর্ট পাচ্ছেন না তিনি। ফলে দেশটিতে বৈধ হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন তিনি।
পাভেল আরও বলেন, ‘আমরা চাই বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে, দেশকে আরও শক্তিশালী করতে। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় তা করতে পারছি না। বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদ্প্তর আমাদের এ সুযোগ দিচ্ছে না। তারা আমাদের কাছ থেকে পাসপোর্টের ফি’র জন্য প্রায় ১০০ ইউরো নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের পাসপোর্ট আটকে রেখেছে। তারা কি চায় না আমরা বৈধ হই।’
জড়িপে দেখা গেছে, নতুন পাসপোর্টের আবেদন ছাড়াও পাসপোর্টে নিজের নাম, পিতামাতার নাম, বয়স, ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্য সংশোধন ও পরিবর্তন করতে চান। অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তোয়াক্কা না করে দালালদের মাধ্যমে ভুয়া নাম ও ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট করে গ্রিসে এসেছেন। দালালদের দেওয়া এ সব পাসপোর্ট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।
এ বিষয়ে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, ঢাকায় আটকে থাকা পাসপোর্ট দ্রুত সবাই হাতে পাবেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দ্রুত পাসপোর্ট হাতে পাবেন। এমনকি দেশে বৈধতার সুযোগ পাবেন।
এদিকে, গত ১৮ই আগষ্ট গ্রিসে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বৈধ করতে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস। এ সময় প্রায় অর্ধশতাধিক পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যার থাকা প্রবাসীরা উপস্থিত হয়ে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং নানা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।