বিমানবন্দরে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় আন্ডারপাস

বিদেশ ফেরত যাত্রীরা ইচ্ছে করলে হেঁটে আন্ডারপাস ব্যবহার করে সহজে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। হজযাত্রীরা হজক্যাম্প থেকে সহজে বিমানবন্দরে যেতে পারবেন। যাত্রী-দুর্ভোগের পাশাপাশি যানজটও কমবে অনেকটাই। এমনই এক আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৮৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়/সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে- ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস প্রকল্প।’ পরিকল্পনা কমিশন যাচাই-বাছাই করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠাবে। একনেক চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রস্তাবিত আন্ডারপাসে ৯টি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ থাকবে। এগুলো হচ্ছে- হজক্যাম্প, আশকোনা, বিমানবন্দর রেলওয়ে (বিআরটি) স্টেশন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-১, ২ ও ৩, বিমানবন্দর উত্তর গেট, দক্ষিণ গেট ও এমআরটি স্টেশন।

আন্ডারপাস ব্যবহার করে হজক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরের টার্মিনালে যাওয়া যাবে। আবার বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে সরাসরি এমআরটি (মেট্রোরেল) স্টেশনে যাওয়া যাবে। যাত্রী ও পথচারীরা এর মাধ্যমে নিরাপদে বাস, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে পারবেন।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরেই শুরু হবে প্রকল্পের নির্মাণকাজ। আগামী দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বলছে, রেলওয়ে স্টেশন এবং এর চারপাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি বাস ও মেট্রো স্টেশনসহ রাজধানীর ব্যস্ততম পয়েন্টগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বিমানবন্দর গোলচত্বর। এই এলাকায় একটি মাত্র ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী চলাচল করে।

গাজীপুর হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত বিমানবন্দর সড়কে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট দেখা যায়। ফুটওভার ব্রিজ অপ্রতুল হওয়ায় বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও পথচারী এর নিচ দিয়েই রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে বলে এ জায়গায় প্রায়ই তীব্র যানজট হয়; ঘটে দুর্ঘটনা। প্রস্তাবিত আন্ডারপাসটি তৈরি হলে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের (আরএইচডি) প্রস্তাব অনুযায়ী, আন্ডারপাসটি হবে শতভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে থাকবে ৮টি লিফট, ২৮টি এসকেলেটর ও ২৫টি ট্রাভেলেটর।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দেশের ৩২ জেলাকে সংযুক্ত করেছে। ব্যস্ততম এই মহাসড়কের একপাশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিপরীত পাশে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন। বাস্তবায়নাধীন বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩, এমআরটি লাইন-১, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সেপ্রেসওয়ে এবং বিআরটি প্রকল্প বাড়িয়ে দিয়েছে এই অঞ্চলের কর্মব্যস্ততা।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ১৪ হাজার ৭৭৭ জন পথচারী ও যাত্রী একটি মাত্র ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে এই মহাসড়ক পারাপার হন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

ডিপিপিতে আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত এলাকায় নতুন রেলওয়ে ট্র্যাক সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। খুব শিগগির এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিআরটি বাস সুবিধা। এ ছাড়া এমআরটি ১-এর বাস্তবায়ন হলে এ এলাকায় যাত্রী চাপ বাড়বে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী এ এলাকায় চলাচল করবে। এর একটি বড় অংশ আন্ডারপাসের সুবিধা নেবে।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক মাস্টারপ্ল্যানে একটি মূল পথচারী টানেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিমানবন্দরের এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের আগে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়েছিল। সমীক্ষা অনুযায়ী, বিমানবন্দরটি ২০৩৫ সালের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ যাত্রী পরিবহন করবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশনা দেন।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় পথচারী আন্ডারপাস অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি পুনরায় পরিদর্শন করে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে। ২০১৯ সালের মার্চে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি আন্ডারপাসের নকশা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি তাতে সম্মতি জানান। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উত্থাপন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.