আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত প্রদেশে আঘাত হানা শক্তিশালী ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ‘ছাড়িয়েছে এক হাজার’। এছাড়া ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ।
এই ঘটনায় দেশটির হেরাত প্রদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আফগানিস্তানের সরকারি মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রোববার (৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধারাবাহিক কয়েকটি ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা রোববার ব্যাপকভাবে বেড়ে ‘এক হাজারের বেশি’ হয়েছে বলে দেশটির একজন সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন।
হেরাত প্রদেশে শনিবারের ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের বিষয়ে বিলাল করিমি নামের ওই মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, হতাহতের সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি… মৃতের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি।
অন্যদিকে আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৫০০ জনে পৌঁছেছে বলে রেড ক্রিসেন্টের বরাত দিয়ে রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রেড ক্রিসেন্টের মুখপাত্র এরফানুল্লাহ শারাফজোই রোববার জানিয়েছেন।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে ওই ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পর পাঁচটি বড় ধরনের আফটারশক হয়েছে; যার কেন্দ্রস্থল ছিল ওই অঞ্চলের বৃহত্তম শহরের কাছে।
কর্মকর্তাদের মতে, জিন্দা জান ও ঘোরিয়ান জেলার ১২টি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)-এর তথ্য অনুসারে, পশ্চিম আফগানিস্তানে ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে এবং যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ছিল ৬.৩ মাত্রার। সংস্থাটি বলছে, শনিবার আঘাত হানা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হেরাত শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। এই ভূমিকম্পের পর দেশটিতে ৫ দশমিক ৫, ৪ দশমিক ৭, ৬ দশমিক ৩, ৫ দশমিক ৯ ও ৪ দশমিক ৬ মাত্রার পাঁচটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ফারাহ ও বাদঘিস প্রদেশেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
নিজেকে ডা. দানিশ হিসাবে পরিচয় দেওয়া হেরাতের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ভূমিকম্পে নিহত ২০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির মরদেহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আর ৫১০ জন আহত হয়েছেন। এই সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে।’
অন্যদিকে রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ভূমিকম্পে নিহতদের অনেকের মৃতদেহ ‘সামরিক ঘাঁটি, হাসপাতালসহ অনেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে’। তাই আমরা নিহতের এই সংখ্যাটি নিশ্চিত বা প্রত্যাখ্যান করতে পারছি না।
নাসিমা নামে হেরাতের এক বাসিন্দা শনিবার বলেন, ভূমিকম্প হেরাতে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘লোকেরা তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, আমরা সবাই রাস্তায় আছি।’
হেরাতের পূর্বাঞ্চলে ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ইরানের সাথে। এই শহরটিকে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে মনে করা হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, হেরাত প্রদেশের রাজধানী হেরাত শহরে ১৯ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে।
এর আগে গত বছরের জুনে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এক ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। গত কয়েক দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে সেটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ছিল বলে সেই সময় জানায় দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া চলতি বছরের মার্চে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় সাড়ে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে দুই দেশে অন্তত ১৩ জন নিহত হন।
মূলত হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও ইউরেশীয়-ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থান হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান।