বেতনে লিঙ্গবৈষম্য, আইসল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীসহ হাজারো নারীর ধর্মঘট

আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকবসদোত্তিরসহ হাজার হাজার নারী ধর্মঘট পালন করেছেন। বেতনে লিঙ্গবৈষম্য এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার প্রতিবাদে তারা গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) এই ধর্মঘট পালন করেন।

১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম ইউরোপের এই দেশটিতে এভাবে ধর্মঘট পালন করা হলো। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতিবাদে আইসল্যান্ডের নারীরা মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিলে তাদের সঙ্গে যোগ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকবসদোত্তিরও। তিনি বলেন, দেশে এবং দেশের বাইরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে।

ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার পর মঙ্গলবার আইসল্যান্ডের বেশিরভাগ নারী কর্মী নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করায় এই ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রের স্কুল ও লাইব্রেরিগুলো হয় বন্ধ ছিল নয়তো অল্প কয়েক ঘণ্টার জন্য খোলা ছিল। হাসপাতালগুলো বলছে, মঙ্গলবার তারা শুধু জরুরি সেবা দিয়েছে।

এর আগে এই প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জাকোবসদোত্তির জানান, তিনি মঙ্গলবার কাজে যাবেন না। মন্ত্রিসভার অন্য নারী সদস্যরাও একই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।

রাস ওয়ান পাবলিক রেডিও স্টেশনকে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের দিকে লক্ষ্য করলে মনে হয়, সম-অধিকার অর্জনে ৩০০ বছরও লেগে যেতে পারে।’

সংবাদমাধ্যম বলছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের বৈষম্যমূলক বেতন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। আয়োজকরা জানান, এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শিশুর যত্ন নেওয়ার মতো কাজগুলোর দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যেগুলো থেকে কোনও উপার্জন নেই এবং সাধারণত নারীদের ওপরই এ ধরনের কাজের দায়িত্ব আসে।

নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দিক দিয়ে আইসল্যান্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রগতিশীল দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটি টানা ১৪ বছর ধরে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সের শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে।

তবে স্ট্যাটিসটিকস আইসল্যান্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু কিছু শিল্প ও পেশায় নারীরা পুরুষদের চেয়ে ২০ শতাংশ কম আয় করছেন। আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় জানা গেছে, আইসল্যান্ডের ৪০ শতাংশ নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার লিঙ্গভিত্তিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হন।

মঙ্গলবারের ধর্মঘটের স্লোগান ছিল, ‘এটাকেই কি আপনারা সমঅধিকার বলেন?’

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে নারীদের এক বিক্ষোভের পর মঙ্গলবারের কর্মসূচিই ছিল প্রথম কোনও পূর্ণ-দিবস ধর্মঘটের ঘটনা। সেসময় ইউরোপের এই দেশটির নারী কর্মজীবীদের প্রায় ৯০ শতাংশই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.