প্রথমবারের মতো গাজায় বিমান থেকে সহায়তা সরঞ্জাম ফেলল যুক্তরাজ্য

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বিমান থেকে চিকিৎসা ও সহায়তা সরঞ্জাম ফেলেছে যুক্তরাজ্য। জর্ডানের সঙ্গে চুক্তির পর দেশটির বিমান বাহিনীর সহযোগিতায় এই সহায়তা নিচে ফেলা হয়।

বিমান থেকে ফেলা চার টন সহায়তার মধ্যে ওষুধ, খাদ্য ও জ্বালানিও রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো গাজায় বিমান থেকে সহায়তা ফেলেছে যুক্তরাজ্য। জর্ডানের সাথে একটি চুক্তি করার পর বুধবার জর্ডানের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে ওষুধ, খাদ্য ও জ্বালানিসহ চার টন সহায়তা সরবরাহ উপত্যাটিতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

বিবিসি বলছে, বিমান থেকে ফেলার পর প্যারাসুট লাগানো এই সহায়তা প্যাকেজগুলো গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত তাল আল-হাওয়া হাসপাতালে নেমে আসে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, এই সহায়তা জীবন বাঁচাতে এবং হাসপাতালকে সচল রাখবে।

যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র স্থল ও সমুদ্রপথে গাজায় সাহায্য পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উত্তর গাজায় পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। এই কারণে এই অঞ্চলে বিমান থেকে সহায়তা ফেলেছে দেশটি।

এর আগে গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘লাইভ-সেভিং’ খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বলেছে, ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণে তাদের সহায়তা কনভয়গুলো সম্পূর্ণরূপে বিপর্যয় এবং সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে।

সংস্থাটি আরও বলেছে, এই সিদ্ধান্তটি সহজভাবে নেওয়া হয়নি। তাদের সদস্যরা ব্যাপক ভিড়, বন্দুকযুদ্ধ এবং লুটপাটের সম্মুখীনও হয়েছেন। এছাড়া জাতিসংঘ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলে আসছে। ডব্লিউএফপি বলেছে, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে এই ভূখণ্ডে ‘ক্ষুধা ও রোগের দ্রুত ছড়িয়ে’ পড়ার প্রমাণ রয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত বছরের অক্টোবরে স্থল আক্রমণের শুরুতে ১১ লাখ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াদি গাজার সমস্ত এলাকা থেকে সরে গিয়ে দক্ষিণে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেয়। যেসব এলাকা থেকে সেসময় সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে গাজা শহরও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই শহরটি ছিল যুদ্ধের আগে এই অঞ্চলের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

বেশিরভাগ বাসিন্দাই সেসময় ইসরায়েলি আদেশ অনুসরণ করে, কিন্তু কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি এই এলাকাতেই থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, যাদের অনেকেই আবার পালিয়ে যেতে সক্ষম ছিল না। পরে ইসরায়েলি সৈন্যরা এই অঞ্চলটিকে ঘেরাও করে এবং সেখানে হামাসের শক্ত ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

গত মাসে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, অন্তত ৩ লাখ মানুষ এখনও উত্তর গাজায় রয়েছেন যারা বেঁচে থাকার জন্য তাদের সহায়তার ওপর নির্ভর করছেন।
এমন অবস্থায় উত্তর গাজার এসব মানুষকে লক্ষ্য করে বিমান থেকে ৪ টন সহায়তা সরঞ্জাম ফেলল যুক্তরাজ্য। বিবিসি বলছে, ব্রিটিশ জর্ডানিয়ান এই সহায়তা ডেলিভারিতে রোগী ও চিকিৎসা কর্মীদের জন্য ডিজেল, গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং রেশন প্যাক ছিল।

এসব সরঞ্জাম যে হাসপাতালে পৌঁছেছে তা নিশ্চিত করার জন্য এগুলোতে প্যারাসুট এবং জিপিএস ট্র্যাকার যুক্ত ছিল এবং এগুলো ঠিক লক্ষ্যেই অবতরণ করেছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা এই সপ্তাহের শুরুতে জর্ডানের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর অধীনে গাজায় ১০ লাখ পাউন্ড মূল্যের সাহায্য পাঠাবে যুক্তরাজ্য।

চুক্তির বিষয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন: ‘(এই সহায়তায়) হাজার হাজার রোগী উপকৃত হবে এবং জ্বালানি গাজার এই অত্যাবশ্যক হাসপাতালটিকে কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে, গাজার পরিস্থিতি খুবই খারাপ এবং দ্রুতই উল্লেখযোগ্যভাবে আরও সাহায্যের প্রয়োজন। আমরা গাজায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অতিরিক্ত সাহায্য সরবরাহের সুযোগ দিতে এবং বন্দিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে মানবিক বিরতির আহ্বান জানাচ্ছি।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.