প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কালোটাকা ও জাল নোটের বিরুদ্ধে যে লড়াই তিনি শুরু করেছেন, তা ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের মধ্য দিয়েই শেষ হবে না। ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোট বাতিলের প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ বুধবার দিল্লিতে ধর্মঘট করার কথা। এর আগের দিন গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় সংসদ ভবনে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে মোদি ‘আরও ব্যবস্থা’ নেওয়ার এই হুমকি দেন।
মোদি বলেন, গরিব ও সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়েই তাঁর দল ক্ষমতায় এসেছে। নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত সেই মানুষদের স্বার্থেই। তিনি বলেন, কালোটাকার বলি সবচেয়ে বেশি সাধারণ মানুষ।
এই বৈঠকের পরেই মোদি টুইটের মাধ্যমে অনুরোধ করেন, তাঁর সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, জনগণ যেন তা জানান। কালোটাকা ও জাল নোটের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আর কী কী সরকারের করা উচিত, সেই পরামর্শও মোদি দিতে বলেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, মোদি এই লড়াইয়ে জনগণকেও শামিল করতে চাইছেন।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগেই নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব অধিকাংশ বিরোধী দল। ব্যতিক্রমী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের দল সংযুক্ত জনতা পার্টি। তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির শরিক দল শিবসেনা করছে বিরোধিতা। তৃণমূল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি এই বিরোধিতাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। আজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজধানীতে যন্তর মন্তরে এর বিরুদ্ধে ধরনায় বসছেন। একই দিনে ১৩টি বিরোধী দল সংসদ ভবনে গান্ধীমূর্তির সামনে বিরোধিতায় নামবে।
সংসদীয় অধিবেশন চললেও নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা এখনো শুরুই করা যায়নি। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির জন্য বিরোধীদের শর্ত সরকারপক্ষ মানতে রাজি নয়। কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী এ নিয়ে মোদিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। সংসদ ভবনে মঙ্গলবার তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদের বাইরে এ নিয়ে কথা বলতে পারেন, টিভিতে বলতে পারেন, পপ মিউজিক শো-এ ভাষণ দিতে পারেন অথচ সংসদে বিতর্কে অংশ নেওয়ার ফুরসত তাঁর নেই! বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর হঠকারিতার জন্য গরিব মানুষ মারা যাচ্ছে, অথচ সরকার বিকারহীন। এই অবস্থায় বামপন্থীরা মোদির বিরুদ্ধে সংসদ অবমাননার নোটিশ দিতে চলেছে।
সংসদীয় দলের বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বর আবেগঘন হয়ে ওঠে। দলের এক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধীরা গরিববিরোধী বলায় তিনি ব্যথিত। মোদি বলেন, দুর্নীতির মূলে ঘা দিয়েছেন বলেই বিরোধীরা প্রমাদ গুনছেন। অথচ যাঁদের জন্য এই সিদ্ধান্ত, সেই গরিব মানুষ এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানাচ্ছে।