নেপালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশুরা

42272755bd322e326d90613abeda8713-Nepal-childজোবায়ের আহম্মেদ অভি: তিন বছরের ছোট্ট শিশু রাজকুমার শ্রেষ্ঠ। চোখে-মুখে তার তীব্র কষ্ট আর যন্ত্রণার ছাপ। যন্ত্রণা লাঘবের জন্য যখন রাজকুমারকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন সে শক্ত করে মাকে আঁকড়ে ধরল। ২৫ এপ্রিল নেপালে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে আহত শিশুদের একজন সে। তার মতো শত শত শিশু এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছে।

রাজকুমারদের বাড়ি সিন্ধুপালচকের ইয়ংলাবোর গ্রামে। ভূমিকম্পের সময় শিশুটি এক তলা ভবনের একটি বাড়িতে ছিল। আর তার বাবা-মা বাড়ির পাশেই খেতে কাজ করছিলেন। ভূমিকম্পে মা-বাবা অক্ষত থাকলেও পা ভেঙেছে শিশুটির। ভূমিকম্প-দুর্গতদের সেবা দিতে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে ভারতীয় সেনা চিকিৎসক দল স্থাপিত মেডিকেল ইউনিটে মা ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। এ সময় ভয়, যন্ত্রণা আর আতঙ্কে থাকা শিশুটি কোনোভাবেই তার মাকে ছাড়তে চাইছিল না।

নয় বছর বয়সী শিশু মিরকে তামাং। ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে, মিরকে তখন সিন্ধুপালচকের বাড়িতে চাচাতো দুই ভাইয়ের সঙ্গে খেলা করছিল। ওই দুই ভাই মারা গেলেও প্রাণে বেঁচে যায় সে। তবে তার পা ভেঙে গেছে ও সারা শরীর জখম হয়েছে। মিরকের মা-বাবাও রাজকুমারের মা-বাবার মতো এ সময় বাড়ির বাইরে খেতে কাজ করছিলেন।

নেপালে ২৫ এপ্রিল প্রথম ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরবর্তী দুই দিনেও ভূমিকম্প-পরবর্তী অনেকগুলো কম্পন হয়। প্রথম দফার ভূমিকম্পটি দুপুরের দিকে হয়েছিল, তখন ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ নারী-পুরুষ খেতে কৃষিকাজে ব্যস্ত ছিলেন। বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন শিশুসন্তানদের। এতে করে তারা বেঁচে গেছেন। তবে অনেকেই চিরদিনের মতো প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছেন। আবার কারও কারও সন্তান পঙ্গু হয়ে গেছে আজীবনের জন্য।

মিরকের বাবা হরিয়া বললেন, ‘স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞ, আমার সন্তানটা বেঁচে আছে। তবে আমার দুই ভাই তাঁদের সন্তানদের হারিয়েছেন।’ ওই দিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘দিনের বেলা ছিল। আমরা সবাই কাজে গিয়েছিলাম। আর বাচ্চারা বাড়িতে ছিল, খেলাধুলা করছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে বাচ্চারা ভূমিকম্পের সময় ঘরের ভেতর ছিল। তাতেই এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সন্তানের মৃত্যু দেখার মতো হৃদয়বিদারক আর কিছু নেই।’

ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগে কঠিন সময় পার করছে সিন্ধুপালচকের বাসিন্দারা। তাদের কাছে নেই খাদ্য-পানির মতো জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ। শিশুদের অবস্থা আরও খারাপ। পাঁচ বছর বয়সী সুজল ভূজেলের মা-বাবা জানালেন, তাঁদের কাছে খাবার নেই। তিন দিনে কেউ তাঁদের কিছু খেতে দেয়নি। সন্তানকেও কিছু খেতে দিতে পারছেন না। শুধু বিস্কুট জুটেছে।

সেপতুয়াজেনারিয়ান ইয়ামবাহাদুর থাপার কথায়ও ওঠে এল ত্রাণহীন জীবনধারণের কথা। তিনি জানালেন, প্রথম দফার ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় তিনি ঘরের বাইরে ছিলেন। মুহূর্তেই সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। দুর্যোগের পর মানুষ খাবারের সন্ধানে ছোটাছুটি করেছে। কিন্তু কোথাও খাবার মেলেনি। খেত থেকে শস্য কেটে কোনো রকমে খেয়ে জীবনটা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। আর অপেক্ষায় আছেন ত্রাণের। সাংবাদিককে দেখে ইয়ামবাহাদুর থাপার ভাই কৃষ্ণবাহাদুর জানালেন, ওই দুর্যোগের পর এই প্রথম বাইরের কোনো লোক তাঁদের এলাকায় এলেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.