সামান্য যন্ত্রাংশের অভাবে সিঙ্গাপুরে তিনদিন পড়ে থাকল বিমানের উড়োজাহাজ

সামান্য যন্ত্রাংশের অভাবে সিঙ্গাপুরে তিনদিন পড়ে থাকল বিমানের উড়োজাহাজ।

সামান্য একটা যন্ত্রাংশের অভাবে সিঙ্গাপুরে তিনদিন অচল হয়ে পড়েছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ উড়োজাহাজ। রবিবার এটিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রকৌশল বিভাগের চরম গাফিলতি ও ব্যর্থতায় এভাবে একের পর এক উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড হচ্ছে। টানা তিনদিন উড়োজাহাজটি গ্রাউন্ডেড (বসে যাওয়ায়) হওয়ায় একদিকে শতাধিক যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন, অন্যদিকে তিনদিন গ্রাউন্ডেড থাকায় বিমানকে গচ্চা দিতে হয়েছে অন্তত পঞ্চাশ লাখ টাকা। বিমানের প্রকৌশল বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণে চরম ব্যর্থতার দরুণ এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটলেও প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক সাজ্জাতুর রহিম বলছেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। যান্ত্রিক ত্রুটি যে কোন সময় হতে পারে। এ নিয়ে হৈ চৈ করার সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, শুক্রবার বিমানের (বিজি৮৫) ফ্লাইটটি যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফেরার সিডিউল ছিল। কিন্তু হঠাৎ উড়োজাহাজটি অচল হয়ে যাওয়ায় ১২০ জনের বেশি যাত্রী আটকা পড়েন সিঙ্গাপুরে। সেন্সর নামে উড়োজাহাজটির একটি যন্ত্রাংশে কাজ না করায় এটি অচল হয়ে পড়ে। মূলত এই যন্ত্রাংশের মাধ্যমেই একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করে। সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় রওনা হওয়ার প্রাক্কালে ফ্লাইটটির সেন্সর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এতে বিমানটি আর উড়তে পারেনি। বাধ্য হয়েই চাঙ্গী বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয় উড়োজাহাজটি। এরপর যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় হোটেলে। যাত্রীদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হলেও তাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হয়।

এদিকে নতুন ‘সেন্সর’ কোথাও খুঁজে না পেয়ে ঢাকায় হ্যাঙ্গারে চেকআপে থাকা বিমানের অপর একটি ৭৩৭ উড়োজাহাজের সেন্সর খুলে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। সেটা লাগিয়েই অচল উড়োজাহাজটিকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয় রবিবার। অথচ এই সেন্সরটি সিঙ্গাপুরে এ ধরনের ত্রুটি মাত্র এক ঘণ্টাতেই দেয়া সম্ভব ছিল। সেখানে এ ধরনের ইমার্জেন্সি ব্যাক-আপ দেয়ার জন্য মোটা অংকের টাকায় একটি কোম্পানির সঙ্গে বিমানের চুক্তি রয়েছে। তারপরও শুক্রবার ৭৩৭ উড়োজাহাজটির সেন্সর সংযোজনের মতো ন্যূনতম সেবা পায়নি বিমান। যে কারণে বিমানকে ঢাকা থেকে অপর একটি ৭৩৭ থেকে সেন্সর খুলে প্রকৌশলীসহ সিঙ্গাপুর পাঠাতে হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রকৌশলী সেখানে গিয়ে ‘সেন্সর’ লাগানোর পরই উড়োজাহাজটিকে রবিবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। প্রশ্ন উঠেছে, সিঙ্গাপুরে এ ধরনের সংকট মোকাবেলায় সেখানকার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সকে নিয়োগ দেয়া হলেও এদিন কোন সেবা পাওয়া যায়নি। একটি সেন্সরের ত্রুটি দেখা দেয়ায় তিনদিন একটি ফ্লাইট অপারেট থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বিমানের যে ক্ষতি হয়েছে- টাকার অংকে তা কত হতে পারে বিমান সেটাও জানাতে পারেনি। বিমানের গ্রাহকসেবা বিভাগ জানিয়েছে, এতে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার গচ্চা গেছে বিমানের।

অথচ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স কেন এ ধরনের সাপোর্ট দেয়নি জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলেছেন, এটা লাইন মেন্টেনের সাপোর্ট, তারা তা দিতে বাধ্য নয়। যদিও ওদের কাছে এ ধরনের এক্সট্রা সেন্সর ছিল, তারা এটা দিয়ে নিজের এয়ারলাইন্সকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চায়নি।

এ সম্পর্কে প্রকৌশল শাখার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শুধু রক্ষণাবেক্ষণের চরম ব্যর্থতা ও অদক্ষতায় সম্প্রতি একের পর এক উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এমনকি দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্টদের রহস্যজনক ভূমিকায় ফ্লাইটে যাত্রী বসিয়ে রেখে ত্রুটি মেরামতের মতো ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এ থেকে বাদ যাচ্ছে না ভিভিআইপি ফ্লাইট।

বিমানের গ্রাহকসেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা এখন প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বে আছেন, তাদের ভূমিকা রহস্যজনক। বিশেষ করে পরিচালক পদে পরিবর্তন আসার পর থেকে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে প্রকৌশল বিভাগের দক্ষ ব্যবস্থাপনা। এ সম্পর্কে এক প্রকৌশলী বলেন, একটি উড়োজাহাজ অবতরণের পর কি কি চেক করতে হয়, কত ঘণ্টা হ্যাঙ্গারে রাখতে হয়, কত ঘণ্টা আগে সেটা বোর্ডিং ব্রিজে নিয়ে যেতে হয়, এ সবই এসওপি মেনে করতে হয়। ওই এসওপি এখন আর আগের মতো নেই। যে কারণে ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটছে। সিঙ্গাপুরে ৭৩৭ এর সেন্সর নামের যে যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় গোটা উড়োজাহাজটি অচল হয়ে তিনদিন সেখানে গ্রাউন্ডেড থাকল সে দায় দায়িত্ব প্রকৌশল বিভাগকেই নিতে হবে। কেননা যন্ত্রাংশটি খুব ব্যয়বহুলও নয়। প্রকৌশল বিভাগের জানা উচিত ছিল এ ধরনের একটি যন্ত্রাংশ যে কোন সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার আগাম ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে হয়। অন্তত এ ধরনের কম ব্যয়বহুল যন্ত্রাংশের মজুদ থাকলে তিন দিন উড়োজাহাজটি অচল পড়ে থাকত না। জানতে চাইলে পরিচালক প্রকৌশল শাখা সাজ্জাতুর রহিম বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটি যে কোন সময় হতে পারে। এ নিয়ে কাউকে দায়ী করা যাবে না, কারোর গাফিলতিও বলা যাবে না।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.