আজ দুপুর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের প্রায় সব ফ্লাইট বাতিল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ (৩০ ডিসেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে বিমানবন্দরে যাতায়াতে অসুবিধায় পড়তে হবে আকাশপথের যাত্রীদের। এ অবস্থায় আজ দুপুর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটের প্রায় সব ফ্লাইট বাতিল করেছে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো। এয়ারলাইনসগুলোর বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
নভোএয়ারের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার একেএম মাহফুজুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, যাত্রীদের যাতায়াতের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের দিন অভ্যন্তরীণ রুটের ১৪টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এগুলো সবই ছিল সকালের ফ্লাইট। দুপুরের পর ঢাকা থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ গন্তব্যগুলোয় এক থেকে দুটি করে ফ্লাইট চালানো হবে।
তিনি জানান, দুপুরের পর ঢাকা থেকে সিলেটে দুটি, যশোরে দুটি, কক্সবাজারে একটি, চট্টগ্রামে একটি এবং সৈয়দপুরে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আর ঢাকা-কলকাতা রুটের দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আগের সূচি অনুযায়ী চলবে।
আজ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট শিডিউল সীমিত করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজও। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস তাদের অভ্যন্তরীণ রুটের সকালের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। দুপুরের পর ঢাকা থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল রুটে একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করবে এয়ারলাইনসটি। অন্যদিকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটটি বাতিল করেছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ফ্লাইট সংখ্যা ছয়টি থেকে তিনটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) সোহেল মাজিদ জানান, সাধারণ যাত্রীদের কথা ভেবেই ৩০ ডিসেম্বর অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট সংখ্যা কমানো হয়েছে। তবে কলকাতা ছাড়া অন্যান্য আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ফ্লাইটগুলো স্বাভাবিক থাকবে। তিনি বলেন, ভোটের দিন আন্তর্জাতিক রুটে সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, দোহা ও মাসকাটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করবে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এসব রুটের বেশির ভাগ যাত্রীই প্রবাসী শ্রমিক; যারা অনেক আগেই এসব টিকিট কেটে রেখেছিলেন। তাই এসব ফ্লাইট রিশিডিউল করাও সম্ভব নয়। আমরা আশা করছি, যাত্রীরা আগের দিনই ঢাকায় আসবেন।
বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমিয়ে আনলেও রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়মিত ফ্লাইট শিডিউলে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ গতকাল বলেন, নির্বাচনের দিন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমানের সব ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী চলবে। আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে বিমানবন্দরে আসেন।
এদিকে নির্বাচনের আগে-পরে টানা চব্বিশ ঘণ্টা সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের গণপরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিদেশফেরত যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে দুর্ভোগে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে গতকাল বিমানবন্দরে জরুরি সমন্বয় সভা করেন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক। বৈঠকে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে বিমানবন্দরের বহির্গামী ও আগমনী যাত্রীদের যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, যাত্রীরা এত সংখ্যক গণপরিবহন কীভাবে পাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দৈনিক শতাধিক ফ্লাইট ওঠানামা করে। এতে কমপক্ষে ২০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। তাদের জন্য যে সংখ্যক গণপরিবহন থাকা আবশ্যক নির্বাচন উপলক্ষে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ নিয়ে সংকট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২৯ ডিসেম্বর (শনিবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর (রোববার) মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সড়কপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এর আওতায় রয়েছে—বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, স্থানীয় পর্যায়ে যন্ত্রচালিত বিভিন্ন যানবাহন। এছাড়া ২৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ২০১৯ মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তবে গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, ভোটের দিন যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস্তবতার ভিত্তিতে নির্দেশনা শিথিল করা হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য কাগজ দেখাতে হবে। যেমন ধরুন, কেউ বিদেশে যাবেন বা আসবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে টিকিট দেখাতে হবে। আবার কেউ যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে চান, তাকেও ছাড় দেয়া হবে।