বিমানে বৈমানিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তনের অভিযোগ

বিমানে বৈমানিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তনের অভিযোগ।

রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে চলছে বৈমানিক সংকট। সংকট উত্তরণে বৈমানিক নিয়োগের প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পথে। তবে অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে একাধিকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তন করেছে বিমানের মানব সম্পদ বিভাগ। এতে বৈমানিক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বিতর্কিত হওয়ার পাশাপাশি নিয়োগপ্রত্যাশীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বৈমানিক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিমানের মানব সম্পদ উপবিভাগ। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি ও এইচএসসি (গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানসহ) অথবা সমমানের ন্যূনতম জিপিএ-৩ থাকার কথা বলা হয়। এছাড়া ও-লেভেল এবং এ-লেভেল হলে গ্রেড বি থাকা প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় জিইডি ডিগ্রিধারীরা এতে অংশ নিতে পারবেন না। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সধারীরা (সিপিএল) অথবা বেবিচক থেকে এনডোর্স করা ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারবেন।
২০১৮ সালের বিমানের ওই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার কিছুদিন পর আবারো সংশোধন আনা হয়। এতে জিইডি ডিগ্রিধারীদের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। ফলে তারাও আবেদনের সুযোগ পান এবং লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। পাঁচ-সাতজন প্রার্থী পাসও করেছেন। এছাড়া বোয়িং ৭৩৭ এবং ড্যাস-৮ উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্যতা সর্বোচ্চ ৩০ বছরের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ক্ষেত্রে ৩২ বছর) পরিবর্তে ৪০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (প্রশাসন) পার্থ কুমার পণ্ডিত বলেন, ২০১৮ সালে প্রথম যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল, সেটিতে অনেক কম আবেদন পড়েছিল। এ কারণে পরবর্তী সময়ে আবার সংশোধন করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। যেন আরো বেশি প্রার্থী আবেদন করতে পারেন। বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে সুযোগ দিতে এটি করা হয়েছে বলে যারা অভিযোগ করছেন, তারা ঠিক বলছেন না। তিনি বলেন, বিমানের বর্তমানে বৈমানিকের স্বল্পতা রয়েছে। শিগগিরই আরো উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হবে। বৈমানিকস্বল্পতার সংকট মেটাতে বিমান কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
এর আগে ২০১৬ সালে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিমানের মানব সম্পদ উপবিভাগ। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ন্যূনতম জিপিএ ৩ নিয়ে এসএসসি এবং এইচএসসি। উভয় ক্ষেত্রেই গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞান বিষয় থাকতে হবে। ও-লেভেল এবং এ-লেভেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বি গ্রেড থাকতে হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সধারীরাও (সিপিএল) প্রার্থী হিসেবে যোগ্য হবেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ এবং বিদেশ থেকে জিইডি ডিগ্রিধারীরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। যদিও পরবর্তী সময়ে জিইডি ডিগ্রিধারীদের সিপিএল দিয়েছিল বেবিচক। কিন্তু ওই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তারা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ওই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগে ২৬ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন। লিখিত পরীক্ষায় পাস করা চাকরিপ্রত্যাশীদের থেকে ১০ কিংবা ১২ জনকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও বিশেষ প্রার্থীকে সুবিধা দিতে ২৬ জনকেই বিবেচনায় নেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একজন প্রাক্তন বৈমানিক ২৬তম হয়েছিলেন। যাকে সুযোগ দিতেই সবাইকে নিয়োগ দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। যদিও ওই ২৬ জনের মধ্যে কয়েকজন প্রশিক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েকবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে বিমানের।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বহরে উড়োজাহাজ রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ও ২টি বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’ উড়োজাহাজ। এছাড়া রয়েছে চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ও ৩টি ড্যাস-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ। এর বাইরে আরো দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। কুয়েতভিত্তিক এভিয়েশন লিজ অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানি (এএলএএফসিও) থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ড্রাই লিজে নেয়া উড়োজাহাজ দুটি বিমান বহরে যুক্ত হবে চলতি জানুয়ারি মাসেই। আর চলতি বছর সেপ্টেম্বরে যুক্ত হবে বোয়িং থেকে কেনা আরো দুটি বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’ উড়োজাহাজ। এছাড়া দুটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ লিজ নিতে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র (আরএফপি) আহ্বান করেছে বিমান। ২০১৯ সালের মে মাস থেকে পাঁচ বছরের জন্য ড্রাই লিজে বহরে যুক্ত করা হবে উড়োজাহাজ দুটি। এদিকে কানাডার উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বোম্বার্ডিয়ার অ্যারোস্পেসের তিনটি ‘ড্যাশ-৮ কিউ৪০০’ কিনছে বিমান। উড়োজাহাজ তিনটি আগামী ২০২০ সালের মার্চ, মে এবং জুনে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
উড়োজাহাজগুলো ধারাবাহিকভাবে বহরে যুক্ত হলে বর্তমান ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট বৃদ্ধির পাশাপাশি চলতি বছর গুয়াংজু, মদিনা, কলম্বো এবং মালে রুটে ফ্লাইট চালু করবে বিমান। আর ফ্লাইট কার্যক্রম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়বে বৈমানিকের।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.