নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে যা ঘটেছে তাতে ‘দুঃখ পেয়েছেন’ থাই রাজকুমারী!

প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে যা ঘটেছে, সেজন্য ‘দুঃখ পেয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের রাজকুমারী উবোরাতানা রাজকন্যায়া সিরিভাধানা বার্নাভাদি।

রাজকুমারী উবোরাতানা বলেছেন, তার প্রার্থীতা যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে ‘এখনকার দিনে ও সময়ে তা হওয়া মোটেও উচিত নয়’। খবর বিবিসি

সোমবার থাইল্যান্ডের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজা মাহা ভাজিরালংকর্নের বড় বোন রাজকুমারী উবোরাতানাকে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করেন।

থাই নির্বাচন কমিশনের এক বার্তায় বলা হয়েছে, দেশটির ঐতিহ্য অনুযায়ী- রাজপরিবারের সদস্যরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। একই সঙ্গে তারা কোনো রাজনৈতিক পদেও থাকতে পারেন না।

এর আগে শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজা মাহা ভাজিরালংকর্নের পক্ষ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে বলা হয়, রাজপরিবারের কোনো সদস্যের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থাই সংবিধানের পরিপন্থী।

আর এ কারণে রাজভক্তি দেখিয়ে রাজার নির্দেশে রাজকুমারীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে থাই রক্ষা চার্ট পার্টি।

শনিবার দলটি এক বিবৃতিতে বলেছে- রাজা চাইলে রাজকন্যার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।

শুক্রবার প্রথা ভেঙে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন রাজকন্যা উবলরত্না। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী থাই রাজপরিবার রাজনীতির বাইরেই থাকে। বোনের এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজা ভাজিরালংকর্ন।

প্রধানমন্ত্রী পদে লড়ার ঘোষণাকে ‘সঠিক নয়’ উল্লেখ করে প্রাসাদের এক বিবৃতিতে রাজা জানান, রাজবংশীয় হয়েও তার বোন নির্বাচনে অংশ নিলে তা ‘জাতীয় সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করা হবে।

থাইল্যান্ডের সংবিধান অনুসারে রাজপরিবার সবসময়ই নিরপেক্ষ থাকবে। রাজকন্যার নির্বাচনে অংশগ্রহণে সেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটবে।’

রাজার এ বিবৃতির পর থাই রক্ষা চার্ট পার্টি জানিয়েছে, ‘রাজকীয় আদেশ মেনে চলবে দল।’ রাজকীয় ‘ঐতিহ্য ও প্রথাকে’ সম্মান জানিয়ে দলটি তার কর্তব্য পালনে প্রস্তুত বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

ভাই বিরোধিতা করলেও রাজকন্যা নিজের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থিতার সিদ্ধান্তকে যথার্থই মনে করছেন।

শনিবারে ইনস্টাগ্রামে দেয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভালোবাসা ও সমর্থন দেয়ার জন্য সব থাই নাগরিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উবলরত্না বলেন, ‘সব ধরনের রাজমর্যাদা ত্যাগ করে তিনি এখন সাধারণ নাগরিকের মতো যাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হয়ে নিজের অধিকারের চর্চা করতে চাই। থাইল্যান্ডকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গ্র্যাজুয়েট রাজকন্যা ১৯৭২ সালে মার্কিন নাগরিক পিটার জেনসনকে বিয়ে করে রাজমর্যাদা ত্যাগ করেন।

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০০১ সালে থাইল্যান্ডে ফিরে আবারও রাজকীয় জীবনযাপনে অংশ নিতে শুরু করেন।

থাই রাজপ্রাসাদের বিবৃতিতে রাজা ভাজিরালংকর্ন বলেন, লিখিতভাবে পদমর্যাদা ত্যাগ করলেও তিনি (রাজকন্যা) এখনও রাজমর্যাদা ভোগ করেন এবং রাজপরিচয় বহন করেন।

রাজপ্রাসাদের বিবৃতির জবাবে রাজকন্যা বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব পদে প্রার্থী হয়ে একজন সাধারণ নাগরিকের মতোই তার অধিকারের চর্চা করতে চান তিনি।

তিনি বলেন, তিনি দায়িত্ব নিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন এবং তিনি থাইল্যান্ডের সব নাগরিকের সমৃদ্ধির প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল থাকবেন।

২৪ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে দীর্ঘ ৫ বছরের জান্তা শাসকের পর গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরার একটি বড় সুযোগ। থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্র অবমাননা আইন বেশ কঠোর।

এ জন্য রাজার হস্তক্ষেপে নির্বাচন কমিশন রাজকন্যার প্রার্থিতা অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.