পাকিস্তানে দুই দিনের সফর শেষে ভারতের পথে রওয়ানা হয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সঙ্গে নিয়ে গণমাধ্যমকে জানান পাকিস্তানের ওপর তার বিশ্বাসের কথা। এরপর তিনি ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। সূত্র: ডন
এশিয়ার চারটি দেশ সফর করবেন সৌদি যুবরাজ। এ সফরের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে নয়া দিল্লির উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন তিনি।
রোববার সন্ধ্যায় সামরিক যুদ্ধবিমানের প্রহরায় পাকিস্তান পৌঁছান তিনি। প্রায় একদিনের মতো পাকিস্তানে থাকার পর তিনি এখন ভারতের পথে।
এর আগে রোববার ইসলামাবাদের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে ২১টি তোপধ্বনির মাধ্যমে যুবরাজকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ইমরান খান ও দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। সৌদির আকাশসীমায় যুবরাজের বিমান প্রবেশের পর পাক বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান জেএফ-১৬ এবং থান্ডার জেটএফ-১৭ আকাশপথে নিরাপত্তা দেয়। তাছাড়া যুবরাজের বিমানটিকে পাক নৌ-বাহিনীর যুদ্ধবিমান প্রহরা দিয়ে নূর খান বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যায়।
এরপর দুই পাশের অনার গার্ড ঘেরা যুবরাজ লালগালিচায় পা রাখেন।
যুবরাজের নিরাপত্তার জন্য শহরটির মূল সড়কগুলোতে যান চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে হাজারখানেক পুলিশ চৌকি। নিষিদ্ধ করা হয়েছে শহরের ওপর দিয়ে বিমান চলাচল।
এছাড়া ইসলামাবাদের একটি বড় অংশজুড়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট পরিষেবা। সৌদি যুবরাজ সফর উপলক্ষে সোমবার ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।
এদিকে যুবরাজ পাকিস্তানে পৌঁছানোর পরই দুই হাজার কোটি ডলারের সমমূল্যের বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ চুক্তি সই করেছে। এর মধ্য দিয়ে বন্ধু দেশকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সহযোগিতার ঘোষণা দিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে চলমান বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই তিনি এ সফরে আসেন। সেখানে যুবরাজের এ বিনিয়োগ স্বস্তি বয়ে আনবে বলে ধারনা বিশ্লেষকদের খবর এএফপির।
এর মধ্য দিয়ে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে যুবরাজ তার দক্ষিণ এশিয়া ও চীন সফর শুরু করেছেন।
আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে পাকিস্তান। আশা করা হচ্ছে, এসব চুক্তি টলোমলো অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে পাকিস্তানকে কিছুটা হলেও নিষ্কৃতি দেবে।
রোববার দুই দেশের মধ্যে অন্তত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে পাশ্চাত্যে এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এর পাঁচ মাস পর ধোঁয়াশা থেকে একটু ফুরসত পেতে তিনটি দেশ সফরে বেরিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ সময়ের মিত্র দেশ সৌদি আরবকে ধন্যবাদ দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, যেটা আগে কখনো ছিল না।
গত গ্রীষ্ণে ক্ষমতায় আসার পর দুই দফায় সৌদি সফরে গিয়েছেন সাবেক ক্রিকেট কিংবদন্তি থেকে রাজনীতি বনে যাওয়া ইমরান খান। ভারত ও সৌদির চির বৈরী ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে। দেশ দুটির অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের দেশে প্রাণঘাতি সন্ত্রাসী হামলাকারী উগ্রগোষ্ঠীগুলোকে নিজের মাটি ব্যবহার করতে দিচ্ছে পাকিস্তান।
সৌদি যুবরাজের পা রাখার আগেই দিল্লির অভিযোগকে নাটকের মহড়া হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তান সফরের পরেই ভারতে যাবেন এমবিএস। সেখানে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার চীন সফরের মধ্য দিয়ে নিজের দক্ষিণ এশিয়া সফর শেষ করবেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
যুবরাজের কড়া সমালোচক বলে পরিচিত ওয়াশিংটন পোস্টের প্রদায়ক খাশোগি হত্যার ঘটনায় প্রচণ্ড কূটনৈতিক সংকটে রয়েছে সৌদি আরব। এ হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করে রিয়াদ বলছে, নীতিহীন এক অভিযানে তিনি নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার তুরস্ক বলছে, এ ঘটনায় উদঘাটন করা সব তথ্য তারা এখনো প্রকাশ করেনি।