আজ নরেন্দ্র মোদির শপথ

আজ নরেন্দ্র মোদির শপথ।

ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার শপথ নিতে যাচ্ছেন।

সন্ধ্যা ৭টায় রাইসিনা হিলসে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাকে শপথ পাঠ করাবেন। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাও শপথ নেবে।
এ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ অনুষ্ঠানে প্রথমে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তা বাতিল করেছেন।
মমতা যোগ না দিলেও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী যোগ দিচ্ছেন।
এ শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যোগ দিচ্ছেন। এদিকে মোদির নতুন মন্ত্রিসভা কারা থাকছেন তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভির।
মোদির প্রথমবারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু এবার বিমসটেক সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানকে এড়াতে ‘বিমসটেক’ সদস্যভুক্ত দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কারণ পাকিস্তান বিমসটেকের সদস্য নয়। জানা গেছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানের প্রতিনিধিরা শপথ অনুষ্ঠানে আসছেন।
১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রায় দেড় মাস ধরে সাত দফায় লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ মে একযোগে ফল ঘোষণা করা হয়।
এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট ৩৫৩টি আসন। সরকার গঠনের জন্য ৫৪২ আসনের মধ্যে ২৭২টি আসন পেলেই যথেষ্ট ছিল বিজেপির। সেখানে বিজেপি এককভাবে বিজেপি ৩০৩টি আসন পেয়েছে। এ জয়ের মধ্য দিয়ে মোদির ‘আব কি বার ৩০০ পার’ স্লোগানই সত্য হয়।
আর একইসঙ্গে ভারতের ইতিহাসে ঢুকে পড়েন মোদি। তিনিই হলেন ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলেন। অর্থাৎ কোনো জোট বা শরিক দলের সাহায্য ছাড়াই সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার (২৭২) ছাড়িয়ে গেছে বিজেপির।
এর আগে জওহরলাল নেহরু পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের হয়ে। ১৯৬৭ সাল ও ১৯৭২ সালে পরপর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। অপরদিকে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বাড়লেও ইউপিএ জোটের ভরাডুবি হয়েছে।
মমতা ব্যানার্জি, চন্দ্রবাবু নাইডু, মায়াবতী-অখিলেশদের জোট গড়ার চেষ্টা করলেও নিজেদের রাজ্যেই তাদের পরাজয় শোচনীয় হয়েছে।
সিদ্ধান্ত বদল, শপথ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না মমতা : বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি টুইট করে শপথ অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
টুইটে মমতা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণের মতো একটি অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে একটি দল। মঙ্গলবার রাতে মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- গত ছয় বছরে পশ্চিমবঙ্গে খুন হওয়া বিজেপি কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে ‘বিশেষ আমন্ত্রিত’ হিসেবে রাখা হবে।
বুধবার এ খবর জানার পর শপথ অনুষ্ঠানে না যাওয়ার নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানান মমতা। এক টুইটে তিনি বলেন, ‘অভিনন্দন, নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি। আমার পরিকল্পনা ছিল ‘সাংবিধানিক আমন্ত্রণ’ গ্রহণ করা এবং শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা। যাই হোক, গত এক ঘণ্টায়, আমি গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখছিলাম যে বিজেপি দাবি করেছে বাংলায় রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাংলায় কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। ওই সব হত্যাকাণ্ড ব্যক্তিগত শত্রুতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা অন্য কোনো বিরোধের কারণে হয়ে থাকতে পারে। এর কোনোটির সঙ্গেই রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
এরপর তিনি লেখেন, ‘তাই, আমি দুঃখিত, নরেন্দ্র মোদি জি, অনুষ্ঠানে না থাকতে এটি আমাকে বাধ্য করল।’
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণাকালে মোদির সঙ্গে মমতার তীব্র কথার লড়াই হয়েছিল। এ লড়াইয়ে কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। নির্বাচনের পর দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নির্বাচিত লোকসভা সদস্যদের প্রথম বৈঠকে মোদি জানিয়েছিলেন, প্রচারে কে কী বলেছিলেন সেগুলো মনে না রেখে সবাইকে নিয়ে উন্নয়নের পথে হাঁটতে চান তিনি। মোদির ওই আহ্বানের প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে ও রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ‘খুন হওয়া’ ৫৪ জন বিজেপি কর্মীর পরিবারকে শপথ অনুষ্ঠানে রাখার বিজেপির পরিকল্পনার কারণেই মমতার সিদ্ধান্ত বদল বলে বলছে ভারতীয় গণমাধ্যম। নিজের টুইটে তিনি তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বলেও মন্তব্য আনন্দবাজার পত্রিকার।
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকে শুরু করে লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত বিজেপির ৫৪ জন কর্মী ও সমর্থক খুন হয়েছেন বলে দাবি ভারতের ক্ষমতাসীন দলটির। তাদের পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে শপথ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কারা থাকছেন মন্ত্রিসভায়? : শাহ স্ট্র্যাটেজি ও মোদি ক্যারিশমায় বিপুল জয়লাভের পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে এনডিএ জোটে তুমুল তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কাদের মন্ত্রিত্ব দেয়া হবে তা নিয়ে মঙ্গলবার পাঁচ ঘণ্টা ধরে বৈঠকে করেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ। কে কে মন্ত্রী হচ্ছেন, কে কোন দফতর পাচ্ছেন- তা নিয়ে ভারতজুড়ে আলোচনা চলছে।
দলীয় সূত্র জানায়, এবার ২০ শতাংশ নতুন সদস্য মন্ত্রিত্ব পেতে যাচ্ছেন। লোকসভায় বিজেপির একার ঝুলিতেই ৩০৩টি আসন। তবে সহযোগী দলের নেতাদেরও বড় পদ দেয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন শাহ
। জয়ী আসনের ভিত্তিতে মন্ত্রীর সংখ্যার অনুপাত নিয়ে ফর্মুলা নির্ধারণে মগজ খাটান মোদি-শাহ। বাংলার সংসদ সদস্যদের ঝুলিতে আসতে পারে গুরুত্বপূর্ণ দফতর। তেলেঙ্গনা থেকে জয়ী সংসদ সদস্যদেরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এবারের মন্ত্রিসভায় অমিত শাহও থাকতে পারেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কয়েক মাসের মধ্যেই মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড এবং হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন হবে।
পাশাপাশি আগামী বছর দিল্লি ও বিহারেও বিধানসভা নির্বাচন হবে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি। এ পরিস্থিতিতে অমিতকেই সেনাপতি হিসেবে দেখতে চাইছেন দলের একটা বড় অংশ। তাই কোনো কোনো বিজেপি কর্মী চান নির্বাচন অবধি দলের সভাপতি পদে থাকুক অমিত শাহ। শেষমেশ মন্ত্রিসভায় অমিত অন্তর্ভুক্ত হন কিনা সেটা জানা যাবে আজ।
এবারের মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বদল হতে পারে। অরুণ জেটলি মন্ত্রিত্ব থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি মন্ত্রিত্ব চান না।
বিজেপির অন্দরমহলের খবর, কিছু পরিবর্তন হলেও প্রথম মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যকেই দ্বিতীয়বার দায়িত্ব দিচ্ছেন মোদি। রাজনাথ সিং, নীতিন গডকরি, নির্মলা সীতারামন, রবিশঙ্কর প্রসাদ, পীযূষ গোয়েল, নরেন্দ্র সিং তোমর, প্রকাশ জাভড়েকররা নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার প্রতিনিধিত্ব মন্ত্রিসভায় বাড়ছে। এবার পশ্চিমবঙ্গে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। এতদিন রাজ্যের দুই সংসদ সদস্য মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সংখ্যা বাড়ে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে বিজেপিতে।
বিহারে বিজেপি জোট শরিক জনশক্তি পার্টির নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের এবারও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাবেন কিনা সেটাও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। কিছুদিন আগে রামবিলাস বলেছেন, ছেলে চিরাগকে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় দেখতে চান।
কিন্তু দলের অধিকাংশ সদস্য চাইছেন রামবিলাস নিজেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সদস্য হোন। ছেলেও এমন কথাই বলেছেন সংবাদমাধ্যমে। তবে শিবসেনা ও জেডির (ইউ) অন্তত দুই সংসদ সদস্যদের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আকালি দলের হরসিমরত কৌর বাদলও মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন।
অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি : মোদির শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগ দিতে নয়াদিল্লি রওনা হয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বুধবার বিকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সফরসঙ্গীদের নিয়ে রওনা হন আবদুল হামিদ।
বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকায় কূটনৈতিক কোরের ডিন, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার, তিন বাহিনী প্রধান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় জাপান সফরে থাকায় প্রতিবেশী দেশটির প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছেন না। মোদির প্রথমবারের শপথে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী যোগ দিয়েছিলেন।
তিন দিনের এ সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গেও আবদুল হামিদের বৈঠক হতে পারে বলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন। অনুষ্ঠান শেষে ৩১ মে দেশে ফিরবেন রাষ্ট্রপতি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.