কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি হয় স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের বিশেষ সুরক্ষাসামগ্রী এন-৯৫ মাস্ক। বিশ্বজুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় এন-৯৫ মাস্কের সংকট দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মাস্ক রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে ডাক্তারদের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে সুখবর নিয়ে এসেছেন টেক্সাসের একজন নার্স। তিনি নিজ উদ্যোগে সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে এমন একটি মাস্ক ডিজাইন করেছেন যেটা এন-৯৫ এর বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এমনকি সুরক্ষার দিক থেকে এটা এন-৯৫ এর চেয়েও বেশি কার্যকরি।
কেএসএটি ১২ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেক্সাসের সান আন্তোনিওয়ে ইউনিভার্সিটির হেলথ চিফ এক্সিকিউটিভ নার্স টমমি অস্টিন এন-৯৫ মাস্কের স্বল্পতার কথা বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে এই মাস্কটি ডিজাইন করেছেন। কভিড-১৯ জয়ের প্রত্যাশায় তিনি এই কাজ শুরু করেছেন। মে মাসেই এটা বাজারে আসবে।
মিসেস অস্টিন বলেছিলেন যে, স্থানীয় ছোটখাটো দোকানে কিনতে পাওয়া যায় এমন সামগ্রী থেকে তৈরি এই মাস্ক ভাইরাস থেকে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে।
তিনি বলেছিলেন, ‘রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রসমূহ থেকে আমরা যখন জানতে পেরেছিলাম যে, একটি পট্টি বা রুমাল ব্যবহার করেও আমরা মাস্কের সমান সুরক্ষা পেতে পারি। তখনই আমার মাথায় এই মাস্ক তৈরির পরিকল্পনাটি আসে। এন-৯৫ মাস্ক স্বল্পতার কারণে অনেক ডাক্তার ও মেডিক্যাল স্টাফরা কভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নিজেদের ঝুঁকির মাঝে ফেলছেন। এটা দেখেই মূলত নিজস্ব প্রযুক্তিতে এন-৯৫ মাস্কের বিকল্প তৈরি করার দিকে নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মাস্ক কী উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে অস্টিন বলেন,’আমাদের এই মাস্কের বাতাস ফিল্টার করার উপাদানটি আমরা টেক্সাসের হিউস্টন থেকে কিনেছিলাম। এক মাস্কের সঙ্গে ব্যবহার করে দেখা গেছে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত ফিল্টারেশন করতে পারে। এছাড়া আমরা অন্য আরেকটা ফিল্টার ব্যবহার করেছি সেটাতে ৯৭ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধন দক্ষতা রয়েছে। আমরা সাউথ ওয়েস্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি, যাতে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে আমরা বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে একটি ভাল পণ্য মনুষকে উপহার দিতে পেরেছি।’
অস্টিন আরো বলেন, এটা ব্যবহারে কার্বন ডাই অক্সাইড ভিতরে আটকা পড়ে না। ফলে দীর্ঘ সময় মাস্কটি পরে থাকলেও আপনার কর্ম চাঞ্চল্যে কোন বিঘ্ন ঘটবে না। এমনকি মাথা ব্যথাও করবে না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আরামদায়ভাবে এটা পরে থাকতে পারবেন।
এখন পর্যন্ত মিসেস অস্টিন এবং তার দল ৬০০টি মাস্ক তৈরি করেছে এবং আরো ৬ হাজার ৫০০ মাস্ক তৈরি করতে যাচ্ছেন। যদি চাহিদা বেশি হয় তাহলে অতিরিক্ত সরবরাহের প্রয়োজনে অন্যদের সঙ্গে মাস্ক তৈরির নকশাটি ভাগ করে নেবেন বলে জানিয়েছেন অস্টিন। তবে সাউথ ওয়েস্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের সঙ্গে করা গোপনীয়তা চুক্তির কারণে এখুনি তারা সেটা প্রকাশ করতে পারছেন না।
তিনি বলেছিলেন, ‘নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে নার্সদের অবর্ণনীয় এবং হৃদয়বিদারক গল্প শুনে আমার মনে হয়েছে কিছু একটা করা দরকার। সুতরাং আমার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল এই মাস্কটি তৈরি করবো কিছু উপার্জন করার জন্য নয়। এই মাস্ক তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সুরক্ষিত করা।
সূত্র- ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে।