ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটেই নির্বাচন কমিশন ও তার অধীন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাজকর্মে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধছিল। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, যত প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হোক না কেন, শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট লুট ঠেকাতে কোনো কড়া ব্যবস্থাই নেবে না কমিশন। গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দফার ভোটে সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।
সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলো যতই ভোট লুটের ছবি, শাসক দলের গুন্ডাদের পিস্তল-বন্দুক নিয়ে প্রকাশ্যে দাপাদাপি এবং বিরোধী দলের এজেন্টদের নির্বাচনী বুথ থেকে জোর করে বের করে দিয়ে বুথ দখলের খবর তুলে ধরুক না কেন, কমিশন তাতে বিশেষ গা করেনি।
বাঁকুড়া, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর—এই তিন জেলার ৩১টি আসনে কাল সকাল থেকেই শাসক দলের সশস্ত্র গুন্ডাদের দাপাদাপি ও ভোট লুটের খবর ছড়াতে থাকে। টিভির পর্দায় একের পর এক বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের রক্তাক্ত ছবি ফুটে উঠতে থাকে। কিন্তু ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে বা বুথের ভেতরে ও বাইরে বিরোধী দলের এজেন্টদের নিরাপত্তা দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে সন্ত্রাসের যে আবহে ভোট হয়েছে, তার একটা ইঙ্গিত মেলে কমিশনের কাছে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যায়।
৪ এপ্রিল প্রথম দফায় ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটে অনিয়ম ও বেআইনি কাজকর্মের অভিযোগ এসেছিল ৫৬৭টি। আর কাল প্রথম তিন ঘণ্টাতেই পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। বিকেল চারটার মধ্যে (ভোট শেষ হতে তখনো এক ঘণ্টা বাকি) অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৪০০। তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের দাবি, ভোট ভালোভাবেই হয়েছে।
সব দেখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের গোপন সমঝোতা নিয়ে জল্পনা বেড়ে চলেছে। মোদিভাই (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) ও দিদিভাইয়ের (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মধ্যে গোপন আঁতাতের অভিযোগে সরব বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন। সারা দিনই কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিরোধী দলগুলো।
সন্ত্রাস ও বুথ দখলের সঙ্গে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রেও দেখা গেল কমিশন সমান উদাসীন। সিপিএমের নেতা এবং কংগ্রেস-সিপিএম জোটের প্রধান নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে প্রার্থী ছিলেন। তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র নারায়ণগড়ের বিভিন্ন বুথ থেকে তৃণমূল কংগ্রেস জোর করে সিপিএম এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে—এ খবর পেয়ে তিনি তা দেখতে যান। তিন জায়গায় তাঁকে তৃণমূলের কর্মীরা ঘিরে ধরে হেনস্তা করেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে আরও একবার যখন একই ঘটনা ঘটে, তখন সিপিএমের কর্মীরা রুখে দাঁড়ান।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও বর্তমানে রাজ্যে গণতন্ত্র বাঁচাও ফোরামের সদস্য অশোক গাঙ্গুলি বলেন, এটা নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অপরাধ। সারা দিন দফায় দফায় এই কাণ্ড ঘটে চললেও নির্বাচন কমিশন একবারও হস্তক্ষেপ করেনি।
তা সত্ত্বেও সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, ওরা ভয় পেয়েই গুন্ডামি করছে, ভোট লুট করছে। ভোটের সার্বিক ফলে তার বিশেষ প্রভাব পড়বে না। তিনি এ কথা বললেও ভোটের বাকি পাঁচ দফার ভোট-পর্ব কীভাবে নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করবে, তার ইঙ্গিত মিলছে।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও কমিশনের উদাসীনতার সুযোগে শাসক দল ব্যাপক হারে ভোট লুট করেছিল। এবার সেই আশঙ্কা বাড়ছে।
আরও খবর