ইকুয়েডরে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, এখনও ১ হাজার ৭শ’ লোক নিখোঁজ রয়েছে। ফলে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির সরকার জানিয়েছে, ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৪৮০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। পেডেরনালেস ও মান্টার মতো উপকূলীয় শহরগুলোতে শিকারী কুকুর ও যান্ত্রিক খননযন্ত্রসহ উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তুপের ভেতর তল্লাশী ও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মৃতদেহগুলো থেকে গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ও উদ্ধারকর্মীরা দুর্গতদের সহায়তায় ঘটনাস্থলে ছুটে গেছে। তারা ধ্বংসস্তূপের ভেতর চাপা পড়া পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হোটেলে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাজধানী কুইতোয় উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিয়েগো ফুয়েন্টেস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তালিকাভুক্ত ২ হাজার লোকের সন্ধানে তল্লাশী চালাচ্ছি। কিন্তু আমরা এ পর্যন্ত ৩শ’ জনকে পেয়েছি।’ সরকারের দেয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এই ঘটনায় ৪ হাজার ৬০৫ জনের মতো লোক আহত হয়েছে। দুর্গত এলাকা সফরকালে প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া বলেন, ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে ৫৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্যোগ কবলিত মান্টা শহরের স্থানীয় বাসিন্দারা ধৈর্য হারাতে শুরু করেছে। শহরটিতে ২ লাখ ৫৩ হাজার লোকের বাস। স্থানীয় বাসিন্দা পেদ্রো মেরো বলেন, ‘উদ্ধার কাজ অত্যন্ত মন্থর গতিতে চলছে। মানুষের জীবন যাচ্ছে। শনিবার রাত থেকে আমরা এখানে আমাদের আত্মীয়দের খবরের আশায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তিনি আরো বলেন, তার তুতোভাই মান্টা শহরের একটি চারতলা মার্কেটের ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে। লুইস ফিলিপ নাভারো বলেন, তিনি নিশ্চিত যে তার ভবনের কংক্রিট ও ধাতব ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়া মানুেষরা জীবিত ছিল। ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৮শ’ অবকাঠামো ধসে গেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার টেলিফোনে তাদের মেসেজ পাই। তারা জানান যে তারা ১০ জন একটি গর্তে আটকা পড়ে আছে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি তাদের কথা উদ্ধারকারী দলকে জানাই। কিন্তু তারা আমার কথায় কান দেয়নি।’ মান্টায় প্রেসিডেন্ট কোরেয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা খুব কঠিন সময় পার করছি। তবে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি খাবার ও পানি বন্টন করছিলেন। ওই এলাকাটিকে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো মনে হচ্ছিল। উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে কলম্বিয়া, মেক্সিকো, এল সালভাদোর, স্পেন ও অন্যান্য দেশের কয়েকশ জরুরি কর্মী ইকুয়েডরের কর্মকর্তাদের সহায়তা করছে। এই ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরা রোগবহনকারী মশার কামড় ও দূষিত পানি পান করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, ভূমিকম্পে ১ লাখ ৫০ হাজার শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংস্থাটি আরো জানায়, ভূমিধসের কারণে কোন কোন দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। কোন কোন শহর বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় রয়েছে। স্প্যানিশ রেড ক্রস অনুমান করেছে যে ইকুয়েডরে ১ লাখ লোকের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।