কৃষি খাতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
কৃষি খাতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এশিয়ার গণ্ডি পার করে বিশ্বে সবজি উৎপাদনে জনবহুল বাংলাদেশ এখন তৃতীয় অবস্থানে। কেবল সবজি-ই নয় ধান উৎপাদনেও বিশ্বে আয়তনের দিক থেকে অনেক পেছনে থাকা বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, আমে সপ্তম ও আলুতে অষ্টম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি খাত। বিশ্ব পরিমণ্ডলে যা উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ খাতে শিক্ষিত তরুণরা এখন যোগ দিচ্ছেন। ফলে কৃষি খাত আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার নানা ধরনের সহায়তা করায় কৃষকরা ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। যার প্রভার পড়ছে উৎপাদনে। এই উৎপাদন বিশ্ব পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। মন্ত্রী ও কৃষিবিদ ড. রাজ্জাক বলেন, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার নানাভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে।
কৃষক ঋণ পাচ্ছে, সারের দাম কমানো হয়েছে। তবে এই প্রণোদনা বাড়ানো দরকার। কৃষি শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় আধুনিক যন্ত্রপাতির বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে দ্রুত।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশে মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান এখন ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণ সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ গ্রহণ করা হয়েছে। এর আলোকে জাতীয় কৃৃষিনীতি সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন ডেল্টাপ্লান-২১০০সহ বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা পদক্ষেপের ফলে কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে এ দেশের অবস্থান এখন ১০ম।
সূত্র বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৭ দশমিক ১৪ লাখ মে.টন, উৎপাদন হয়েছে ৪১৩ দশমিক ২৫ লাখ মে.টন। ফলে দেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০০৬ সালে এই উৎপাদন ছিল ২৬১ দশমিক ৩৩ লাখ মে.টন। এক ও দো ফসলি জমি অঞ্চলভেদে ৪ ফসলিতে পরিণত হওয়ায় এ বিপ্লব সম্ভব হয়েছে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে কৃষি পুনর্বাসন চালু ছিল তার অন্যতম।
এই কর্মসূচির আওতায় সাড়ে ৭৪ লাখ কৃষককে ৮২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুই কোটি আট লাখের বেশি কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেয়া হয়েছে। ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টাসহ ২৪ ধরনের ফসল চাষে কৃষকদের ৪ শতাংশ হারে ঋণ দেয়া হয়েছে। কৃষককে উৎসাহিত করতে সারের মূল্য কমানো হয়েছে চার দফা।
এ নিয়ে কথা হয় ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় দেশের কৃষি ও খাদ্যশস্য উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চালের উৎপাদন প্রতি বছর গড়ে ৪.৮৮ লাখ টন হারে বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত আছে। বছরে যে ২২ লাখ লোক যুক্ত হচ্ছে তাদের খাওয়াতে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ লাখ টন চালের প্রয়োজন হচ্ছে। তাই নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে প্রতিনিয়ত পুরাতন জাতকে বাদ দিয়ে চাল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৮৭ ও ৮৯ উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারায় আমাদের নতুন সংযোজন। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে- সেটা বেশি দূরে নয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, লবণাক্ত, খরা, জলমগ্নতা সহনশীল ও জিংকসমৃদ্ধ ধানসহ ১০৮টি উচ্চফলনশীল জাত ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার কারণে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ অবস্থানে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার মে.টন সবজি, ১২ লাখ ৮৮ হাজার মে.টন আম উৎপাদিত হয়েছে। আলু উৎপাদনেও সাফল্য অভাবনীয়। এ ছাড়া দেশে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ফসলের ৫৮৪টি উচ্চফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আর ৪৪২টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারও কৃষকদের উৎসাহিত করেছে।