দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টাকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়েছেন প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। বুধবার মধ্যরাতে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
অর্থ পাচারের মামলায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানসহ চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর পরই শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে আবুল কাশেমকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়।
সিআইডি জানায়, মামলার পর ওই চারজন যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য বিমানবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় তথ্য পাঠানো হয়। এ তথ্যের ভিত্তিতেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে গত বুধবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সময় আবুল কাশেমকে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করে। বৃহস্পতিবার সকালে সিআইডির কাছে আবুল কাশেমকে বুঝিয়ে দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হলে শুনানির জন্য ২৫ জুন (আগামীকাল) তারিখ নির্ধারণ করেন বিচারক। সেই সঙ্গে আবুল কাশেমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অপরাধ তদন্ত বিভাগ বলছে, অর্থ পাচারের মামলায় গত বুধবার ই-কমার্স কোম্পানি আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদারসহ যে চারজনের বিদেশযাত্রায় আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয় তাদেরই একজন আবুল কাশেম। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া বাকি দুজন হলেন আলেশা মার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মঞ্জুর আলমের স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী এবং আলেশা মার্টকে মোটরসাইকেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস কে ট্রেডার্সের মালিক মো. আল মামুন। এর মধ্যে কেবল আবুল কাশেমই গ্রেফতার হলেন।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের পদ পাওয়ার জন্য এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া ১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর আলম ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে দিয়েছিলেন। গত বুধবার ওই চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি তাদের সম্পত্তি অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর কয়েক ঘণ্টা পরই বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন আবুল কাশেম।
এর আগে প্রতারণার শিকার প্রায় তিন হাজার গ্রাহকের আবেদনের ভিত্তিতে তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় গত ৩১ মে এ চারজনসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন।
তিনি জানান, এ চারজন ছাড়াও প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলেশা মার্ট লিমিটেড, আলেশা হোল্ডিং লিমিটেড, আলেশা কার্ড লিমিটেড, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড, আলেশা টেক লিমিটেড, আলেশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, আলেশা রাইড লিমিটেড, আলেশা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লিমিটেড, আলেশা ফার্মেসি লিমিটেড, আলেশা এগ্রো লিমিটেডের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অফার দিয়ে বহু গ্রাহকের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নেয়। তবে তারা কোনো পণ্য বা অর্থ ফেরত না দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ করছে।