হাওয়াই দ্বীপে দাবানলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৮৯

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে দাবানলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভয়াবহ দাবানলে এরই মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। এতে কয়েকশ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।

রাজ্যের গভর্নর জশ গ্রিন সাংবাদিকদের বলেছেন, এ পর্যন্ত ৮৯ জনের প্রাণহানি রেকর্ড করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আমরা জনগণকে তার জন্য প্রস্তত হতে বলছি।

ফেডারেল ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এফইএমএ) জানিয়েছে, দাবানলে ২ হাজার ২০০টিরও বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে নাহয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো পুনর্নির্মাণে অন্তত ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার দরকার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হাওয়াইয়ের এক আইনপ্রণেতা অভিযোগ করেছেন, কর্মকর্তারা দাবানলের ভয়াবহতাকে অবহেলা করার কারণেই এত বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে চলেছে।

মাউই দ্বীপের ঐতিহাসিক শহর লাহাইনার বাসিন্দা অ্যান্টনি গার্সিয়া বলেছেন, তিনি যে অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকতেন, সেটি দাবানলে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তার সব জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

শহরটিতে প্রায় তিন দশক ধরে বসবাস করা ৮০ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ বলেন, সব নিয়ে গেছে, সব। এটি বেদনাদায়ক। এগুলো সামলানো কঠিন।

প্রায় ১৩ হাজার মানুষের বসবাস লাহাইনায়। একসময় শহরটির যেসব হোটেল-রেস্টুরেন্ট সারাক্ষণ প্রাণচঞ্চল থাকতো, দাবানলে পুড়ে আজ সেগুলোর অধিকাংশই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

লাহাইনা থেকে সরিয়ে নেওয়া বাসিন্দারা বলেছেন, তাদের কারও কারও বাড়িতে লুটপাট হয়েছে। তবে পুলিশ এখনো এ তথ্য নিশ্চিত করেনি।

মাউই দ্বীপের পশ্চিমাংশে এখনো বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ নেই। সেখানে দাবানলে ভুক্তভোগীদের খোঁজে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অনুসন্ধানী দলগুলো।

কোস্ট গার্ড বলেছে, শহরের পোতাশ্রয় এলাকায় পানি থেকে তারা ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। এরা আগুন থেকে বাঁচতে সাগরে লাফিয়ে পড়েছিল।

বেঁচে যাওয়া ও বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্গত লোকদের হোটেল ও ভাড়া বাড়িতে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

হাওয়াইয়ের এই দ্বীপটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ধনী ব্যক্তি বাস করেন, যার মধ্যে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও রয়েছেন। তিনি ও তার সঙ্গিনী লরেন সানচেজ এরই মধ্যে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ কোটি ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ভয়াবহ দাবানলটির সূত্রপাত হয়েছিল গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট)। পরে সেটি হারিকেন ডোরার প্রভাবে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড বাতাসে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার পর্যটককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। তবে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এখনো অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

গভর্নর গ্রিনের মতে, হাওয়াই রাজ্যের ইতিহাসে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.