আবেদনময়ী ব্যাপারটা কিন্তু ভৌতিক উপাদান: নওশাবা
কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই মুক্তি পেয়েছে তানিম রহমান অংশু পরিচালিত সিনেমা ‘স্বপ্নের ঘর’। ভৌতিক ধাঁচের এই ছবিতে অভিনয় করেছেন নওশাবা। আজ রোববার দুপুরে ছবিটি নিয়ে কথা বলেছেন এই অভিনয়শিল্পী। জানিয়েছেন ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও।
হঠাৎ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। কোনো প্রচারণাও দেখা যায়নি।
আমি নিজেও জানতাম না। ছবিটি মুক্তির তিন দিন আগে এই সিনেমারই অভিনয়শিল্পী শিমুল খান আমাকে মুক্তির খবর দেন। আমার ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল এক বছর আগে। চিন্তা ছিল, ওই সিনেমার সিনথিয়া চরিত্রের যেন কোনোভাবেই পুনরাবৃত্তি না হয়। কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজও ছেড়ে দিয়েছি। কারণ সব কটি বিজ্ঞাপনচিত্রে আমাকে তিন কিংবা ছয় মাসের গর্ভবর্তী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। আমি অপেক্ষা করছিলাম ভিন্ন কোনো চরিত্রের জন্য। চলচ্চিত্রের দর্শক যেন আমার মাধ্যমে নতুন কিছু পায়। ‘স্বপ্নের ঘর’ ছবিতে এমন চরিত্রে অভিনয় করেছি, যা আগে করা হয়নি। চরিত্রটি দেখে মনে হবে রহস্য মানবী।
সেটা কী রকম?
কম কথা বলা। ব্ল্যাক ম্যাজিক করে। সিনেমায় আমি ছাড়াও অভিনয় করেছেন আনিসুর রহমান মিলন, মম, শিমুল খান। সবার ইতিবাচক চরিত্র। শুধু আমার চরিত্রটা কেউ বুঝতে পারে না। এই চরিত্র না ইতিবাচক, না নেতিবাচক! প্রতি মুহূর্তে খোলস পাল্টাচ্ছে। মেয়েটার মধ্যে বিভিন্ন সত্তা ভর করে। আমার জন্য চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা কঠিন ছিল। আরেকটা কথা, এই চরিত্রের প্রতি রাগও করা যাবে না, ভালোবাসাও যাবে না। আমার চরিত্রের নাম ‘মিসেস ডি সুজা’। যথেষ্ট আবেদনময়ী।
আবেদনময়ী চরিত্র! অভিনয় করতে অস্বস্তি হয়েছিল?
চরিত্রটি যেমন রহস্যময়, তেমনি আবেদনময়ী। ছোট ছোট চোখের চাহনি। ছোট সব বডি মুভমেন্ট। অভিনয়ের সময় আমার অবশ্য অস্বস্তি হয়েছিল। পরে মনিটরে যখন দেখেছি, তখন দারুণ লাগছিল। এই আবেদনময়ী ব্যাপারটা কিন্তু ভৌতিক উপাদান, শুধু আবেদন দেখানোর জন্য না। গল্পকে রহস্যময় দেখানোর জন্য চরিত্রটির এমন কিছু দরকার ছিল, এই জন্যই ভালো লাগছে।
ভৌতিক সিনেমা দেখেন?
কখনো ভৌতিক ছবি দেখিনি। পরিচালক শুটিং শুরুর পাঁচ-ছয় দিন পর আমাকে চূড়ান্ত করেন। প্রস্তুতির সেভাবে কোনো সময় পাইনি। পরিচালককে বললাম, আমি তো জীবনে ভৌতিক ছবি দেখিনি। তিনি বললেন, আপনার কিছুই দেখা লাগবে না। আপনার মধ্যে শিশুসুলভ যে ব্যাপারটা আছে, সেটাই আমার দরকার। আপনি একটা একটা প্রশ্ন করবেন, আমি হাজারটা উত্তর দেব। আমার কষ্ট লাগছে, এত সুন্দর একটা কাজ করলাম, অথচ এতিম শিশুর মতো সিনেমাটা মুক্তি পেয়েছে। আমরা প্রচার করতে পারিনি, দর্শকও জানতে পারেনি।
সবাই যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, তখন ছবিটি মুক্তি দেওয়া ঠিক হলো?
সবার চোখ এখন নির্বাচনের দিকে। এই সময়ে সিনেমাটা মুক্তি দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি। অন্তত দুই সপ্তাহ পর হলে ভালো হতো। তাহলে অনেক দর্শক ছবিটি দেখতে পারত। আর এটা খুব দরকার ছিল।
কেন?
‘স্বপ্নের ঘর’ ছবিতে ভৌতিক একটা স্টাইল তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে ভৌতিক সিনেমা কেমন হওয়া উচিত, ভিএফএক্সের ব্যবহার কেমন হবে, তার ধারণা পাওয়া যাবে। ভৌতিক সিনেমাগুলোতে সাধারণত অভিনয় অনেক লাউড হয়। এখানে পরিমিতিবোধের ব্যাপারে পরিচালক খুব সচেতন ছিলেন। সিনেমাটা সবার দেখা উচিত।
এবার নাটকের প্রসঙ্গ।
নাটকের কাজ একেবারেই করছি না। ‘স্বপ্নের ঘর’ সিনেমার সাফল্য দেখার অপেক্ষায় আছি। এরপর সিনেমায়ই নিয়মিত হব। এ ছাড়া নিজের কিছু কাজ করছি।
সময় কাটছে কীভাবে?
বই পড়ছি। সিনেমা দেখছি।
নিজের কী কাজ করছেন?
সব সময় যে কাজগুলো করে আনন্দ পেয়েছি, সেগুলোই। আগে করতাম অল্প পরিসরে, এখন গুছিয়ে করছি। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছি। এই কাজগুলো অভিনয় শুরুর আগে থেকেই করছি। ক্লাস সেভেন-এইট থেকে করছি। কিছুদিন ধরেই আমার চারুকলার কয়েকজন বন্ধু পরামর্শ দিল, নিজে যেন কিছু বানাই। এরপর তাদের উৎসাহে ‘আলোর খোঁজে’ নামে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানিয়েছি। শুটিং শেষ। আগামী জানুয়ারিতে আবহসংগীতের কাজ শেষ হবে।