মাথার ওপর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়েই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডিলেমা রৌসেফের চিফ-অব-স্টাফ হচ্ছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অপারেশন কার ওয়াশ’ নামে লুলার বিরুদ্ধে ব্যাপক অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় যে তদন্ত পরিচালনা করছিলেন ব্রাজিলের ফেডারেল বিচারক, তাতে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে তার এ নতুন পদ।
প্রেসিডেন্ট রৌসেফ অবশ্য এ ব্যাপারে একমত হতে নারাজ। তিনি বলেছেন, আমার সরকারকে শক্তিশালী করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা সরকারের শক্তিবৃদ্ধির বিপক্ষে, তারাই এ ধরনের কথা বলছেন।
ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী, কেবিনেট সদস্যদের বিচারের এখতিয়ার শুধু দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ‘অপারেশন কার ওয়াশ’-এর আওতায় দু’সপ্তাহ আগে লুলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আর গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন সাও পাওলোর প্রসিকিউটররা। অভিযোগ গঠনের পরদিন, ১০ মার্চ এক সংবাদসম্মেলন করে লুলার গ্রেফতারও চান তারা।
লুলার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ওএএস সমুদ্র তীরবর্তী তার বিলাসবহুল পেন্টহাউজটিতে ব্যাপক সংস্কারের কাজ করেছে। দাফতরিকভাবে পেন্টহাউজটির মালিকানার দালিলিক প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন লুলা।
এ ব্যাপারে ঘুরেফিরে ব্রাজিলের সবচেয়ে আলোচিত পেট্রোবাস কেলেঙ্কারির বিষয়টি উঠে আসছে। রাষ্ট্রীয় এ পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা এবং দেশটির বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কয়েকজন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে।
এর আগে সাও পাওলো’র প্রসিকিউটররা ১৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ গঠন করেন। সে তালিকায় লুলার ছেলেও আছেন।
তবে লুলার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন তিনি। তার মন্তব্য, ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে তাকে বিরত রাখতেই ষড়যন্ত্রকারীরা এসব অভিযোগ করছে।
২০১০ সালে ডিলেমা রৌসেফকে নিজের উত্তরসূরি মনোনয়ন দিয়ে লুলা বলেছিলেন, ২০১৮ সালের আগে তিনি আর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন না।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পেট্রোলিয়াম কোম্পানি পেট্রোবাস কেলেঙ্কারি ও কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মন্দার কবলে পড়া ব্রাজিলে রৌসেফের সরকার বেশ টালমাটাল পরিস্থিতিতে পড়েছে। প্রায়ই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে দেশটির রাজপথে নেমে আসছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
লুলাকে চিফ-অব-স্টাফ করার সিদ্ধান্তে সমালোচনার জবাব দিতে এই ইস্যুটাকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন রৌসেফ। তিনি বলেছেন, লুলা একজন যোগ্য ও দক্ষ রাজনীতিক। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই নেতা আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবেন।
এদিকে, লুলাকে চিফ-অব-স্টাফ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে ব্রাসিলিয়ায় প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের সামনে জড়ো হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া আরো অন্তত তিনটি শহরে রাজপথে নামেন বিক্ষুব্ধ জনতা। আর কংগ্রেসে ব্যাপক হট্টগোল হয়। বিরোধী রাজনীতিকরা এ সময় প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে চিৎকার করতে থাকেন।
প্রসঙ্গত, ব্রাজিলের পের্নামবুকো অঙ্গরাজ্যে ১৯৪৫ সালের ২৭ অক্টোবর এক দরিদ্র, অশিক্ষিত পরিবারে জন্ম নেন লুলা। জীবনের প্রথমদিকে তিনি সাও পাওলোয় একটি গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশব্যাপী পরিচিতি পান। ১৯৮০ সালে ব্রাজিলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সমাজতান্ত্রিক দল ‘ওয়ার্কার্স পার্টি (পিটি)’ গঠন করেন লুলা। চারবার চেষ্টার পর ২০০২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং দুই মেয়াদে এ দায়িত্ব পালন করেন।
ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি সামাজিক বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জন্য হাজার কোটি ডলার আয় করেন এবং এর মাধ্যমে লাখ লাখ ব্রাজিলিয়ানের জীবন বদলে দেন। ২০১০ সালে নিজের হাতে গড়া রাজনীতিক ডিলেমা রৌসেফকে উত্তরসূরি মনোনয়ন দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান তিনি এবং ঘোষণা দেন, সড়কে জীবনধারণের জন্য আমি সরকার থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। যেখানকার মানুষ আমি, সেখানেই ফিরে যাচ্ছি। আগে আমি যতটা মানুষের ছিলাম, এখন তার চেয়েও বেশি হবো। ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত আমি অবসর নিলাম।