যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে যাচ্ছেন, এ কথা এখন নিশ্চিত। কিন্তু দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এ ঘটনায় খুশি হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না। গত অর্ধশতকে জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্পের মতো কম সমর্থন নিয়ে কোনো প্রধান দলের প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মুখোমুখি হননি।
সে কারণে রিপাবলিকান নেতৃত্ব শুধু হোয়াইট হাউস ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন নন; তাঁরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের কারণে এখন রিপাবলিকানদের কংগ্রেসের উভয় কক্ষে যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা-ও হাতছাড়া হতে পারে।
আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে নিজেদের কোনো আসন না খুইয়ে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে আর মাত্র পাঁচটি আসন ছিনিয়ে নিতে পারলেই ডেমোক্র্যাটরা সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে। ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১০ ও ২০১৪ সালের দুটি মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা প্রথমে প্রতিনিধি পরিষদ ও পরে সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারায়। কিন্তু এ বছরের নির্বাচনে তাদের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর হওয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টি আশা করছে, ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে, যা তাদের বিজয় অর্জনে সহায়তা করবে। তাদের জন্য অন্য ভালো খবর, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার জাতীয় পর্যায়ে সমর্থন ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে ভালো খবর হলো, রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অধিকাংশ বিশ্লেষক একমত, এ বছরের নির্বাচনে হিস্পানিক অভিবাসীদের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। জনমত জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্প যেভাবে মেক্সিকানদের নামে কুৎসা রটনা করেছেন, তাতে দুই-তৃতীয়াংশ হিস্পানিক অভিবাসী রিপাবলিকান পার্টির বিরুদ্ধে ভোট দেবে। হিলারি ক্লিনটন যদি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হন, তাহলে এই জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি ভোট তাঁর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নারীদের ব্যাপারে ট্রাম্পের বিভিন্ন সময় করা কদর্য মন্তব্যের কারণে রিপাবলিকান নারীদের ভেতরেই ট্রাম্পের সমর্থন নামমাত্র। ভাবা হচ্ছে, ট্রাম্পের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে অনেক রিপাবলিকান ভোটার হয় ভোটকেন্দ্রে যাবেন না, অথবা গেলেও ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার বদলে হিলারি ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের বাক্সে ভোট দেবেন। তেমনটি আন্দাজ করে হিলারি ইতিমধ্যেই জোরেশোরে রিপাবলিকানদের তাঁর পক্ষে টানার অভিযানে নেমে পড়েছেন।
এ অবস্থায় রিপাবলিকানদের জন্য সবচেয়ে ভয়ের কারণ ঘটতে পারে সেসব অঙ্গরাজ্যে, যেখানে অভিবাসনের কারণে ভোটারদের জনসংখ্যাগত চিত্র বদলে গেছে। এসব রাজ্য হলো ওহাইও, পেনসিলভানিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও নেভাদা। এসব রাজ্যের প্রতিটিতে রিপাবলিকান সিনেটররা নভেম্বরে পুনর্নির্বাচনের সম্মুখীন হবেন। ট্রাম্পের প্রার্থিতায় তাঁরা এতটাই ভীত যে তাঁদের অনেকে প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা শুরু করেছেন বা ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছেন।
প্রতিপক্ষের দুর্বলতা টের পেয়ে সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের নেতা হ্যারি রিড ও অন্য নেতারা যেভাবে সম্ভব রিপাবলিকান প্রার্থীদের ট্রাম্পের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। রিড বলেছেন, ট্রাম্প এখন রিপাবলিকান দলের অঘোষিত নেতা, তাঁর প্রস্তাবিত নীতিই এই দলের নীতি।
ট্রাম্পের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সিনেটর জন ম্যাককেইনের মতো ঝানু রাজনীতিকও ভীত হয়ে পড়েছেন। অ্যারিজোনার এই জনপ্রিয় সিনেটর এ বছর পুনর্নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির উঠতি নারীনেত্রী অ্যান কার্ক প্যাট্রিকের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন।