মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে সাগরপথে পাড়ি দেয়া অবৈধ অভিবাসীদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি শ্রমিক বলে জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি ধারণা করছে, সমুদ্রে ভাসমান অভিবাসীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোহিঙ্গা। বাকিদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে এ কথা বলা হয়েছে। এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রে ভাসমান অভিবাসীদের জীবন রক্ষা এখন ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ হওয়া উচিত।
আন্দামান সাগরে ভাসমানদের অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে বাংলাদেশ মনে করলেও এখন উল্টো কথা বলছে ইন্দোনেশিয়া। তাদের বক্তব্য, এর অধিকাংশই বাংলাদেশি। শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ বলেন, ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় তারা আশ্রয়প্রার্থী নন, তারা শরণার্থী নন, তারা অবৈধ শ্রমিক।
বিশপ অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদপত্রকে বলেন, ইন্দোনেশিয়ার হিসাব অনুযায়ী অধিকাংশই বাংলাদেশি। তারা অবৈধ শ্রমিক বা আশ্রয়প্রার্থী, শরণার্থী নয়। তারা মালয়েশিয়াতে চাকরির খোঁজে যেতে বা প্রলোভনে পড়ে এখানে এসেছে। ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তা হাসান ক্লেইব সিউলে বিশপকে বলেছেন, একটি নৌকার যাত্রীদের উদ্ধার করে তারা ৬০০ জনের মধ্যে ৪০০ জন বাংলাদেশি পেয়েছেন। সাগরপথে অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় না দেয়ার নীতিতে বরাবরই কঠোর অস্ট্রেলিয়া। তাদের বক্তব্য, এতে মানবপাচার উত্সাহিত হয়।
এদিকে উদ্ধার হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিয়ানমার। তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলে দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শুক্রবার মিয়ানমার নৌবাহিনী দুটি নৌকা থেকে ২০০ জনের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করে। তাদের দাবি নৌকায় প্রায় ২০০ বাঙালি ছিলেন। প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সরকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে অভিহিত করে থাকে।
অভিবাসীদের জীবন বাঁচানোই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার:বান কি মুন
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন গতকাল শনিবার বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রে ভাসমান অভিবাসীদের জীবন রক্ষা এখন ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ হওয়া উচিত। চলতি মাসের শেষদিকে থাইল্যান্ডে ১৫ দেশের সম্মেলনে মানুষের দেশান্তরী হওয়ার ‘মূল কারণ’ খুঁজে বের করে তা দূর করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন।
ভিয়েতনামের হ্যানয় সফরকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যখন মানুষ সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে, তখন কীভাবে আমরা তাদের খুঁজে বের করে উদ্ধার করব ও জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দেব, তা এই মুহূর্তের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী সঙ্কট নিরসনে আঞ্চলিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সাগরে ভাসমান অবৈধ অভিবাসীদের সাময়িক আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে। ভাসমান মানুষদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমারও। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এখনো তিন হাজারের বেশি মানুষ সাগরে নৌকায় ভাসছে।